মুরগির ‘বাড়াবাড়ি লাফালাফি’
‘১১০ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে মুরগির দাম ঠেকেছে ২৪০ এ। এখানেই থামবে নাকি আরো ছাড়িয়ে যাবে তা অনিশ্চিত। বরঞ্চ ঈদঘিরে আড়াইশো টাকায় গিয়েও ঠেকতে পারে’— শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকার একটি মুরগির দোকানে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব আবদুল আলী। মুরগির বাজারে দাম নিয়ে এমন লাফালাফি বাড়াবাড়ি চলছে বছরখানেক ধরে। নানা উৎসব-পার্বণ ঘিরে তা ছাড়িয়ে যাচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত। এবার পবিত্র শবে কদর, ঈদুল ফিতর ঘিরে আরো অস্থির বাজার।
রোজার আগে নিম্নমুখী মুরগির বাজার হঠাৎ কেন এমন অস্থির পরিস্থিতি —এমন প্রশ্নে নিরুত্তর বিক্রেতারা। তবে ক্রেতারা বলছেন, সুযোগ বুঝেই ওরা পকেট হাতিয়ে দেওয়ার সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। যখন যেমন ইচ্ছে তেমন দাম, লাগাম টানার কেউ নেই।
কোনো কোনো ব্যবসায়ীর দাবি, বাজারে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা মুরগির দাম বাড়িয়েছেন। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে।
নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী শরিফুল জামান বলেন, ‘দামের বাড়াবাড়ি লাফালাফিতে আমাদের কিছুই করার নেই। বাড়তি চাহিদা থাকায় সাপ্লায়াররা বাড়তি দাম নিচ্ছেন, আমরা সে হিসেবে কেজিপ্রতি বিক্রি করছি। চাহিদা বাড়লেই সাপ্লায়াররা দাম বাড়ায়, আমাদেরও বাড়াতে হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘একদিকে বাচ্চার বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অন্যদিকে মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম অনেক। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচের প্রভাব পড়েছে বাজারে। আর এসবে ভুগছেন ক্রেতারাই।’
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই কেজির বেশি ওজনের ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৩০-২৩৫ টাকায়, দেড় কেজি ওজনের বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২১৫-২২০ টাকায়। এছাড়া লেয়ার ও সোনালি জাতের মুরগির কেজি স্থানভেদে ৩১০ থেকে ৩৩০, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ঈদকে সামনে রেখে মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন দুই নম্বর গেট কর্ণফুলী বাজারের মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ রাসেল। তিনি বলেন, ‘ঈদ ঘিরে মুরগির চাহিদা বেড়ে যাবে। তাই অর্ডার নিতে চাইলেও সাপ্লাইররা চাহিদা মোতাবেক দিতে পারবে না বলছে। যার কারণে দাম বাড়তি থাকার আশংকা আছে।’ সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারেই কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়েছে বলেও দাবি তাঁর।
এদিকে দাম বেড়ে যাওয়ার শংকায় ক্রেতারা ইচ্ছেমতো সদাই করে নিচ্ছেন মুরগি। শুক্রবার ও শনিবার সকাল থেকে মুরগির বাজার ঘিরে দেখা গেছে ভিড়। ঈদের আগেভাগেই ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত মুরগি কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের রাইহান নামে এক ক্রতা বলেন, ‘প্রতিবছরই শবেকদর এলে মাংসের দাম বাড়িয়ে দেয় দোকানিরা। গত এক মাস যাবত মুরগির দাম ২০০ টাকার নিচে নামছেই না। ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ঈদে আরো বাড়বে। তাই একটু আগেভাগে কিনে রাখছি।’
গরিব-মধ্যবিত্তের মুরগি এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে
রমজানজুড়ে গরিব-মধ্যবিত্তদের আমিষের অবলম্বন ছিল মুরগির মাংস। তবে শবেকদর ও ঈদকে ঘিরে সপ্তাহ ব্যবধানে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় তা এখন অনেক পরিবারের জন্য ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ক্রেতারা বলছেন, রোজা ঘিরেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। এখন সেটা অসহনীয় পর্যায়ে আছে। বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এখন নতুন করে শবে কদর ও ঈদকে ঘিরে আবারও বাজারে মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। বলতে গেলে যে যার খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে যাই ধরি, সেটারই দাম বেশি। সবকিছুর দাম বেশি। কয়েকদিন আগেও মুরগির মাংস ছিল ২১০ থেকে ২১৫ টাকা। আর এখন দাম বেড়ে ২৩০-২৪০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাত তুলে সরবরাহকারীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া মুরগির খাদ্য ও বাচ্চার বাড়তি দামকেও সামনে আনছেন অনেকে।