জাতীয়

যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী ও নতুন উপাচার্য

এক প্রতিবাদী মানববন্ধনে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জমান ও সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল। আখতারুজ্জামান বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি গণহত্যায় মূল শক্তি যুক্তরাষ্ট্র। আর মাকসুদ কামাল বলেছেন, বাংলাদেশকে নির্ভরশীল করে রাখার ষড়যন্ত্রে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত।

‘দেশব্যাপী সংঘটিত সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডের’ প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনের আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। মানববন্ধনে দেশব্যাপী সংঘটিত সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করা হয়।

আগামী ৪ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে আখতারুজ্জামানের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন মাকসুদ কামাল। তাঁরা দুজনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থক শিক্ষকনেতা।

মানববন্ধনে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্বে বড় আকারের গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে ফিলিস্তিনে। এটি করছে ইসরায়েল। তাদের পেছনে সহায়ক ও মূল শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছে যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু মিত্র দেশ। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বিশ্বের সব জাতি ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সেই নিরিখে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদও একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

আখতারুজ্জামান বলেন, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে দেশে অগ্নিসন্ত্রাস ও লোক ক্ষয় হয়েছিল। নানা ধরনের নৈরাজ্য ও দুর্বৃত্তপনার কাজ ঘটেছিল। সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনাগুলো সেই সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই ঘটনাগুলো দেশের চলমান অগ্রগতিকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করেছিল। সেটি দেশে পুনরায় হতে যাচ্ছে কি না, তা আতঙ্কিত ও শঙ্কিত করে। শান্তিপূর্ণভাবে আইনের শাসন ও সাংবিধানিক শাসনের আলোকে দেশ পরিচালিত হবে, সেটিই প্রত্যাশিত। এর ব্যত্যয় কোনোভাবেই কাম্য নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তখন ষড়যন্ত্র হলো বাংলাদেশকে কীভাবে নির্ভরশীল করে রাখা যায়। যে রাষ্ট্রটি (যুক্তরাষ্ট্র) ১৯৭১ সালে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে পরাজিত করতে চেয়েছিল, সেই রাষ্ট্রটি এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এ জন্য তাঁরা ঘৃণা ও নিন্দা জানান।

মাকসুদ কামাল বলেন, আজ ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। এই যুদ্ধ ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েল চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে মার্কিন সহযোগিতায়। এই যুদ্ধেরও নিন্দা জানান তিনি।

বিএনপি-জামায়াতের কড়া সমালোচনা করে মাকসুদ কামাল বলেন, তাদের মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচনকে ব্যাহত করা যায় কি না। নির্বাচনকে ব্যাহত করা গেলে অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় আসবে। এর মাধ্যমে হয়তোবা বিএনপি-জামায়াত লাভবান হতে পারে।

মাকসুদ কামাল আরও বলেন, তাঁরা চান, একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। সেই নির্বাচনে বিএনপিসহ বিপথগামী রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করবে, সেটি তাঁদের প্রত্যাশা। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টার পরিচয়ে এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসারও কড়া সমালোচনা করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা। বিএনপির ২৮ অক্টোবরের সহিংসতা ২০১৪ সালের আগুন–সন্ত্রাসের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তারা প্রধান বিচারপতির বাসা আক্রমণ করেছে। এটা বিচার বিভাগের প্রতি একটা প্রাতিষ্ঠানিক হুমকি। সহিংসতার বিরুদ্ধে শুধু প্রতিবাদ জানালে হবে না, প্রতিরোধও করতে হবে।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূইয়া। সঞ্চালনায় ছিলেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন নীল দলের সাবেক আহ্বায়ক আবদুস ছামাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী, শিক্ষক সমিতির নেতা আ জ ম শফিউল আলম ভূঁইয়া, চন্দ্রনাথ পোদ্দার প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d