আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টার মধ্যেই রাফায় তীব্র হামলা

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এই প্রস্তাবের জবাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দিচ্ছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।

অন্যদিকে হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অনড় ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতির এই উদ্যোগের মধ্যেই গাজার সর্বদক্ষিণের শহর রাফার আরও পশ্চিমে ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলি ট্যাংক।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের সঙ্গে কিছু বিষয় যুক্ত করে ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিক জবাব দিয়েছে হামাস ও গাজার অপর সশস্ত্র সংগঠন ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদ। এতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে।

হামাসের জ্যেষ্ঠ এক নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, বন্দিবিনিময়ে দীর্ঘ মেয়াদে সাজা ভোগরত ১০০ ফিলিস্তিনির তালিকা দিতে চায় হামাস। যদিও ১৫ বছর বা এর চেয়ে কম সাজা ভোগরত ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে ইসরায়েল।

হামাসের ওই নেতা আরও বলেন, প্রস্তাবে বড় ধরনের তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি বলে মনে করেন হামাস নেতারা। এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই বলেও মনে করছেন তারা।

হামাসের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল বলেছে, এটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করারই শামিল। তবে এ নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে বলে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এর আগে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের প্রতি আহ্বান জানায় হামাস। এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ক্রমাগত ইসরায়েলের সর্বশেষ (যুদ্ধবিরতি) প্রস্তাব গ্রহণ করার বিষয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা এখনো এ বিষয়ে ইসরায়েলি কোনো কর্মকর্তাকে কথা বলতে শুনিনি।’

তবে হামাসের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনও। তিনি বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে হামাস যে সংশোধনী দিয়েছে, তার কয়েকটি বাস্তবায়ন করার মতো নয়। তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

রাফার আরও পশ্চিমে হামলা
যুদ্ধবিরতির এই তৎপরতার মধ্যেই গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গতকাল বাসিন্দারা জানান, রাতভর রাফার পশ্চিমে আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে রাতের আঁধারেই বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ও তাঁবু ছেড়ে পালাতে হয়েছে।

বাসিন্দারা বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী রাফার আরও পশ্চিমে সমুদ্র তীরবর্তী আল-মাওয়াইস এলাকার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। মে মাসের শুরুর দিকে রাফায় অভিযান শুরুর পর এই এলাকাকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষণা করেছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

তবে আল-মাওয়াইস এলাকায় হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা শুধু গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ‘নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা’ চালিয়েছে। রাফায় অভিযান শুরুর আগে সেখানে প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের মুখে রাফা ছেড়ে তারা কিছুটা উত্তরে সরে গিয়ে মধ্য গাজার খান ইউনিস ও দেইর আল-বালাহ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৪ ঘণ্টায় গাজায় আরও ৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০৫ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৩৭ হাজার ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮৫ হাজারের বেশি।

নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, হাসপাতালে আসা হতাহত ব্যক্তিদের ভিত্তিতেই গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ পরিসংখ্যান দিয়ে থাকে। কিন্তু ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও স্থাপনার নিচে এখনো প্রায় ১০ হাজার মরদেহ পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d