যৌন নিপীড়নকারী ২ শিক্ষককে বাঁচাতে ‘মরিয়া’ স্কলাসটিকার অধ্যক্ষ
পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে দুই শিক্ষকের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় আলোচনার তুঙ্গে চট্টগ্রাম নগরের সেন্ট স্কলাসটিকা স্কুল এন্ড কলেজ। এ ঘটনায় পুলিশ রাকিব উদ্দিন ও সুরজিৎ পাল নামে দুজন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে। এরপর ওই ঘটনায় শিক্ষকদের মধ্যে শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধ। অবস্থা বেগতিক দেখে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় ডায়েরি (জিডি) করেছেন স্কুলটির অধ্যক্ষ।
এদিকে শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেল ৫টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে অভিযুক্ত শিক্ষক সুরজিৎ পাল ও রাকিব উদ্দিনের শাস্তি এবং শিক্ষকতা থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্কুলটির অভিভাবকরা।
‘সেন্ট স্কলাসটিকা স্কুল এন্ড কলেজের সচেতন অভিভাবকবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে দুই শিক্ষকের নিপীড়নের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। অভিযুক্ত দুজন শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছাত্রীটিকে উত্যক্ত করতো। তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সায় না দিলে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেয়। তখন ছাত্রীটির মা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট মৌখিকভাবে জানান এবং প্রতিকার না পেয়ে মহামান্য আদালতে মামলা দায়ের করেন।
বক্তারা বলেন, স্বাভাবিকভাবে এক্ষেত্রে বিদ্যালয় প্রধান হিসেবে অধ্যক্ষের নিরপেক্ষ ভূমিকা আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু অধ্যক্ষ তার তাবেদার কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে আসামিদের পক্ষাবলম্বন করে মনগড়া তদন্ত কমিটির মাধ্যমে একটা ভিত্তিহীন, বানোয়াট রিপোর্ট তৈরির পর অফিসিয়ালি প্রকাশ না করে সেটা মহামান্য আদালতে উপস্থাপনের জন্য আসামিপক্ষের হাতে তুলে দেন।
তারা আরও বলেন, অধ্যক্ষের মনগড়া তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে আমরা লিখিতভাবে আর্চবিশপের নিকট অনাস্থা জ্ঞাপন করি। এ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে পুরো ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিগত ১২ জুন অধ্যক্ষ স্থানীয় কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীরের মাধ্যমে আমাদের জানিয়েছিলেন নতুন কমিটির মাধ্যমে তদন্ত হবে। ওই সময় মৌখিকভাবে আগের রিপোর্ট বাতিল বলেও জানানো হয়। কিন্তু এখনও তিনি লিখিতভাবে ওই রিপোর্ট বাতিল করেননি। বরং আসামিদের জামিনের জন্য তা মহামান্য আদালতে পেশে সহায়তা করেছেন।
শিক্ষকমণ্ডলী ওই রিপোর্ট লিখিতভাবে বাতিলের আবেদন জানাতে গেলে তিনি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে নগরের কোতোয়ালী থানায় জিডি করেন। ইতিপূর্বে একাধিকবার অভিযুক্ত শিক্ষক সুরজিত পালের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ কোনো ব্যবস্হা গ্রহণ করেননি। এতে অধ্যক্ষের অসৎ উদ্দেশ্য সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।-যোগ করেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, এ ঘটনায় আসামিদের প্রতি অধ্যক্ষের পক্ষপাতমূলক আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত। আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় বিদ্যালয়কে কলংকমুক্ত রাখতে চাই। স্কুলের পরিবেশকে আমাদের সন্তানদের জন্য অভয়ারণ্যে পরিণত করতে চাই। আমরা শংকিত আমাদের কন্যাদের নিরাপত্তা নিয়ে।
অভিযুক্ত শিক্ষক সুরজিৎ পাল ও রাকিব উদ্দিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং শিক্ষকতা হতে স্থায়ী বহিষ্কার করার দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।