রমজানে কোরআন তিলাওয়াত করবেন যেভাবে
কোরআন নাজিলের মাস রমজান। তাই অন্য মাসের চেয়ে এই মাসে কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি মুমিনের আগ্রহ থাকে বেশি।
রমজানের তিলাওয়াতে রয়েছে অধিক ফজিলত ও সওয়াবের ঘোষণা। তা ছাড়া হাদিসের ভাষার কোরআনের তিলাওয়াত ওই সুগন্ধি, যা মুমিনের জীবনকে সুশোভিত করে।
হাদিসে তিলাওয়াতকারী মুমিনকে কমলালেবুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আবু মুসা আল আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, কোরআন পাঠকারী মুমিনের দৃষ্টান্ত হলো তুরঞ্জ ফল বা কমলালেবুর ন্যায়। যার গন্ধ ভালো, স্বাদও উত্তম। যে মুমিন কোরআন পড়ে না, তার দৃষ্টান্ত হলো খেজুরের ন্যায়।
এর কোনো গন্ধ নেই বটে, কিন্তু উত্তম স্বাদ আছে। কোরআন পাঠ করে না যে মুনাফিক, সে হানাজালাহ (তিতা) ফলের মতো, যার কোনো গন্ধ নেই অথচ স্বাদ তিতা। আর ওই মুনাফিক যে কোরআন পড়ে তার দৃষ্টান্ত ওই ফুলের মতো, যার গন্ধ আছে কিন্তু স্বাদ তিতা। অন্য এক বর্ণনায় আছে, যে মুমিন কোরআন পড়ে এবং সে অনুযায়ী আমল করে সে কমলালেবুর মতো।
আর যে মুমিন কোরআন পড়ে না, কিন্তু এর ওপর আমল করে সে খেজুরের মতো। (বুখারি, হাদিস : ৫৪২৭)
তা ছাড়া মুমিনের হূদয় সব সময় কোরআনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। দিনের শুরুতে এবং রাতের গভীরে কোরআন তিলাওয়াত করে আর অন্য সময় কাজের ফাঁকে তার আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। একবার সম্পূর্ণ কোরআন খতম হলে সে আবার শুরু করে। তিলাওয়াতের মাধুর্যের প্রতি তার আগ্রহ ও আকর্ষণ কখনো শেষ হয় না।
কখনো বিরক্তি আসে না, বিশেষ করে কোরআন নাজিলের মাস রমজানে কোরআনের প্রতি তার ভালোবাসা ও খতমের পরিমাণ যেন আরো বেড়ে যায়। হাদিসে তাকে ওই মুসাফিরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে যে এক সফর শেষ করে আরেক সফর শুরু করে।
সফরের অর্জিত সম্পদ ও অভিজ্ঞতা তার সচ্ছলতা ও জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে; তেমনি কোরআন তিলাওয়াত তার সওয়াব বৃদ্ধি ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ককে আরো মজবুত করে। হাদিসে এই আমলকে সর্বোত্তম আমল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! কোন কাজ আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়? তিনি বলেন, সাওয়ারি থেকে নেমেই আবার সে সাওয়ার হয়। লোকটি প্রশ্ন করল আল-হাল আল মুরতা হাল কী? তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোরআন শেষ করেই আবার প্রথম থেকে পাঠ করা শুরু করে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯৪৮)
নিহায়া গ্রন্থকার এই হাদিসের ব্যাখ্যায় আরেকটি হাদিস বর্ণনা করেন, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন আমল উত্তম। তিনি বললেন, ‘আল-হাল আল মুরতাহাল’। জিজ্ঞাসা করা হলো, সেটা কী জিনিস? উত্তর দিলেন, শেষ করে আবার আরম্ভকারী। ওই ব্যক্তি যে তিলাওয়াত করে কোরআন খতম করে আবার তিলাওয়াত শুরু করে। তার দৃষ্টান্ত হলো—ওই মুসাফিরের মতো যে তার গন্তব্যে পৌঁছে সেখানের কাজ সমাপ্ত করে আবার যাত্রা শুরু করে। (কানজুল উম্মাল, বর্ণনা : ২৮১২)
ইমাম সুয়ুতি (রহ.) আল ইতকানে লিখেন, যখন কেউ কোরআন খতম করবে তার জন্য মুস্তাহাব হলো পরবর্তী খতমের জন্য আবার শুরু করা।
মহান আল্লাহ পুরো রমজান মাসে অধিক কোরআন খতমের তৌফিক দান করুন।