ধর্ম

রমজানে মাতৃভূমি রক্ষায় যে দুই যুদ্ধ করেছিলেন মহানবী সা.

পবিত্র রমজান হলো কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার মাস। রমজানে মুসলিমরা যেমন ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে, তেমনি পৃথিবীর অশুভ শক্তির বিরুদ্ধেও তারা অস্ত্রধারণ করেছে। রমজান মাসে মহানবী সা. দুটি যুদ্ধ করেছেন, বদর ও মক্কা বিজয়। এর প্রথমটি তিনি করেছিলেন মক্কার আগ্রাসী শক্তির হাত থেকে মদিনা রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য আর দ্বিতীয়টি করেছিলেন পৌত্তলিকদের কবজা থেকে পবিত্র ভূমি মক্কাকে উদ্ধার করার জন্য।

মাতৃভূমির প্রতি নবীজি সা.-এর ভালোবাসা

মহানবী সা. মাতৃভূমিতে শত অত্যাচার ও অবিচারের শিকার হওয়ার পরও দেশত্যাগের সময় অশ্রু বিসর্জন করেন। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! তুমি (মক্কা) আল্লাহর গোটা জমিনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং দুনিয়ার সব ভূমির মধ্যে তুমি আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয়। আল্লাহর শপথ! তোমার থেকে আমাকে উচ্ছেদ করা না হলে আমি চলে যেতাম না। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩১০৮)

মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় মহানবী সা. যখন গারেসুর থেকে বের হয় মদিনার পথ ধরেন, তখন বারবার অশ্রুসিক্ত হয়ে মক্কার দিকে তাকাচ্ছিলেন।

রাসুলুল্লাহ সা.-এর হৃদয়ের ব্যাকুলতা দেখে তাকে মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন। বলেন, ‘নিশ্চয়ই যিনি আপনার জন্য কোরআনকে বিধান করেছেন তিনি আপনাকে অবশ্যই জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনবেন।’ (সূরা কাসাস, আয়াত : ৮৫)

মহানবী সা. মক্কার পাহাড়-পর্বত ও প্রকৃতির সঙ্গেও অন্তপ্রাণ ভালোবাসা পোষণ করতেন। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি মক্কার একটি পাথরকে চিনি, যেটি নবুয়ত লাভের আগেই আমাকে সালাম দিত।আমি সেটাকে এখনো চিনি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৭৭)

নবীজি সা.-এর দুই যুদ্ধ

রমজানে মাতৃভূমির জন্য মহানবী সা.-এর দুটি যুদ্ধের বিবরণ দেওয়া হলো—

বদর যুদ্ধ

দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসে ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এটা ছিল মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। মহানবী সা. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বাধীন একটি বাণিজ্য কাফেলাকে আটক করতে চেয়েছিলেন। তিনি তা করতে চেয়েছিলেন হিজরতের পর মক্কার কুরাইশদের নানামুখী ষড়যন্ত্র, মদিনা থেকে মুসলমানদের বের করে দেওয়ার অন্যায় চাপ, মদিনার উপকণ্ঠে এসে লুটতারাজ ইত্যাদি কারণে।

কিন্তু আবু সুফিয়ানের কাফেলা রাস্তা পরিবর্তন করে নিরাপদে মক্কায় পৌঁছে যায়। মক্কার মুশরিকরা এটাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে মদিনায় সামরিক অভিযান চালায়। সহস্রাধিক সেনার কুরাইশি বাহিনীর বিরুদ্ধে ৩১৩ সদস্যের মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে। কুরাইশের বহু শীর্ষ নেতা নিহত হয়। বদর যুদ্ধের বিজয় মদিনায় সার্বভৌম ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করে।

মক্কা বিজয়

অষ্টম হিজরি রমজান মাসে মুসলিম বাহিনী মক্কা জয় করে। এই বিজয়কে পবিত্র কোরআনে ‘সুস্পষ্ট বিজয়’ বলা হয়েছে। নানা কারণেই মক্কা বিজয় ছিল মুসলমানের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে মক্কা থেকে অন্যায়ভাবে বিতাড়িত মুসলমানরা মাতৃভূতিতে ফেরার সুযোগ পায়, মুসলমানের কিবলা পবিত্র মক্কা পৌত্তলিকতামুক্ত হয়, মুসলমান কাবাঘর দর্শনের অধিকার পায়, সমগ্র আরবে মুসলমানের রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

মক্কার কুরাইশরা হুদাইবিয়া সন্ধির একাধিক ধারা লঙ্ঘন করলে মহানবী সা. মক্কা অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। মুসলিম বাহিনী প্রায় বিনা প্রতিরোধে ও বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করে। মুসলিম বাহিনীতে সদস্য ছিল ১০ হাজার। মক্কা বিজয়ের পর মহানবী সা. সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d