রাগ কমানোর কার্যকর কিছু উপায়
মানুষকে ধোঁকা দেওয়া ও প্রতারণার ক্ষেত্রে ক্রোধ তথা রাগ হচ্ছে, অভিশপ্ত শয়তানের অস্ত্র। শয়তান মানুষকে ক্রোধের বশবর্তী করে বিচ্যুতির ফাঁদে ফেলে বিপথগামীতার দিকে নিয়ে যায়।
রাগ বা ক্রোধ মানবজীবনে সবচেয়ে ভয়ানক শত্রু।
রাগ বা ক্রোধ মানবজীবনে সবচেয়ে ভয়ানক শত্রু। মানুষ যখন রাগান্বিত হয় তখন তার মস্তিষ্ক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কাজ করে না, তার স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পায়; ফলে সে যেকোনো অঘটনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারে। রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার নিমিত্তে মনস্তাত্বিকবিদরা নানাবিধ উপায়ের কথা বলেছেন। কিন্তু আজ আমরা পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে রাগ নিবারণের কার্যকর পন্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে রাগ নিবারণের উপায়ের পদ্ধতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেগুলো-
অন্যের ভুল-ভ্রান্তিকে মার্জনার দৃষ্টিতে দেখা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ (তারা সফল মানুষ) যারা অন্যায় ও পাপকর্ম থেকে নিজেদের বিরত রাখে এবং যখন ক্রোধান্বিত হয় তখন আত্মসংবরণ (তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়) করে। ’ –সূরা আশ শুরা: ৩৭
তাকওয়া ও পরহেজগারিতা। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে তাদের তাকওয়া ও পরহেজগারি হিসেবে অভিহিত করেছেন; যারা ক্রোধকে দমন করতে পারে। অন্যভাবে বলা যেতে পারে যে, ক্রোধ দমনের সক্ষমতাই তাকওয়া ও পরহেজগারিতার পরিচয়।
পবিত্র কোরআনের ভাষায়, ‘আর তোমাদের প্রতিপালকের মার্জনা ও বেহেশতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার বিস্তৃতি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমান; যা তাকওয়াধারীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আর সৎকর্মশীলদের আল্লাহ ভালোবাসেন। -সূরা আল ইমরান : ১৩৩-১৩৪
আমরা প্রত্যক্ষ করি যে, মানুষ যখন জীবন চলার পথে কোনো বাধা কিংবা বিপত্তির শিকার হয়, তখন যদি সে ধৈর্য অবলম্বন না করে তাহলে ক্রোধের বশবর্তী হতে পারে।
‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ (আমি অভিশপ্ত শয়তানের হাত থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) বেশি বেশি পাঠ করা। নিশ্চয়ই অভিশপ্ত শয়তান মানুষের অন্তরে ক্রোধের আগুন প্রজ্বলিত করে। কাজেই ক্রোধের আগুন থেকে বাঁচার অন্যতম কার্যকর পন্থা হচ্ছে, আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। যাতে শয়তানের প্ররোচনা হতে নিরাপদ থাকা যায়।
‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম’ পাঠ করা। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম’- পাঠের মাধ্যমে ক্রোধ নির্বাপিত হয়।
অধিক দরুদ শরিফ পাঠ করা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ শরিফ পাঠ মানুষের আত্মাকে প্রশান্ত এবং ক্রোধকে নিবারণ করে।
সিজদা করা। রাগ ও ক্রোধ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে, মানুষ যখন রাগান্বিত হয়, তখন তার উচিত সিজদাবনত হওয়া। কেননা সিজদা ক্রোধের আগুনকে নির্বাপিত করে। এ সম্পর্কে ইসলামি স্কলাররা বলেন, ক্রোধ হচ্ছে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায়। যা মানুষের মন ও মানসিকতার ওপর (নেতিবাচক) প্রভাব ফেলে। এ অবস্থাতে দেখা যায়, ক্রোধান্বিত ব্যক্তির চোখ রক্তবর্ণ হয়ে যায়। কাজেই যদি কারও মধ্যে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়- তাহলে তার উচিত সেজদাবনত হওয়া। যে ক্রোধান্বিত অবস্থায় সেজদাবনত হবে, আল্লাহতায়ালা তাকে শয়তানের প্রজ্বলিত আগুন থেকে রক্ষা করবেন এবং তার অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি হবে।
অবস্থার পরিবর্তন সাধন। বলা হয়, যদি কেউ বসা অবস্থায় ক্রোধান্বিত হয় তাহলে উঠে দাঁড়াবে। যদি দাঁড়ানো অবস্থায় ক্রোধের শিকার হয়- তাহলে বসে যাবে কিংবা নিজের স্থান পরিবর্তন করবে। এক্ষেত্রে কিছুটা হাটাহাটি করার কথাও বলা হয়েছে। অবস্থার এমন পরিবর্তনের মানুষের ক্রোধের আগুন প্রশমিত হয়।
অজু কিংবা গোসল করা। ক্রোধের আগুন নিবারণের জন্য হাত-পা ধৌত করা অর্থাৎ অজুর আমল ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কাজেই অজু কিংবা গোসল এক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর প্রভাব ফেলে। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ ক্রোধান্বিত হও; তখন অজু কিংবা গোসল করবে। কেননা ক্রোধ হচ্ছে- অগ্নি। আর পানি অগ্নিকে নির্বাপিত করে দেওয়া।