রাঙামাটিতে চাহিদার শীর্ষে ‘রেড চিটাগাং’
পবিত্র ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির জন্য বেশ কয়েক দশক ধরে পছন্দের শীর্ষে রয়েছে রাঙামাটির ‘রেড চিটাগাং’ জাতের গরু।
গরুগুলো পাহাড়ি প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে এর চাহিদা ব্যাপক। সারাদেশে দিনে দিনে এ জাতের গরুর চাহিদা বেড়েই চলেছে।
গরুগুলো কম চর্বিযুক্ত এবং মাংসও সুস্বাদু। এ জাতের গরুগুলো মাঝারি এবং ছোট আকারের হলেও দাম কিন্তু কম নয়। মাঝারি আকারের গরুগুলোর বাজার দর দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা এবং ছোটগুলোর দাম ৬০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে।
পশু বিক্রেতা নাজিম উদ্দিন বলেন, আমরা ছয়জন তরুণ মিলে পশুর ব্যবসায় নেমেছি। এবারের কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৩০টি গরু কিনেছিলাম। এর মধ্যে ২১টি হাটে তোলার আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আরও গরু কিনতে হবে।
বর্তমানে তাদের হাতে আড়াই লাখ টাকা দামের রেড চিটাগাং জাতের গরু রয়েছে বলে জানান তিনি।
পশু বিক্রেতা মো. সাইফুদ্দীন জানান, তার সংগ্রহে ৪০টি গরু রয়েছে। বাজার এখনো জমে ওঠেনি। কয়েকটি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি আশা করছেন, বাজার জমে উঠলে লাভের মুখ দেখবেন।
জেলা শহরের পৌর ট্রাক টার্মিনাল পশুর হাটে গরু নিয়ে আসা মো. গফুর বলেন, জুরাছড়ি উপজেলা থেকে ৩০টি গরু নিয়ে এসেছেন। তার কাছে ৭০ হাজার থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকার গরু আছে। বাজার ভালো হলে লাভ হবে।
এদিকে জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসেছে শহরের পৌর ট্রাক টার্মিনাল এলাকায়। হাটে উল্লেখযোগ্য পশু এখনো ওঠেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির তিনদিন আগে হাট জমজমাট হয়ে উঠবে। ক্রেতারা বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের প্রিয় পশু সংগ্রহ করছেন। আবার অনেকে পশু রাখার ঝামেলা এড়াতে দেরিতে পশু কেনেন।
রাঙামাটি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একেএম ফজলুল হক বলেন, ‘রেড চিটাগাং’ জাতের গরুগুলো হালকা গড়নের হওয়ায় পাহাড়ি এলাকায় সহজে লালন পালন করা যায়। ফ্রিজিয়ান জাতের গরু ভারী হওয়ায় পাহাড়ি এলাকায় পালন করা সহজ নয়। জেলায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৫৯ হাজার ৯৪৬টি। পশু আছে ৬৪ হাজার ৯৯৮টি। উদ্বৃত্ত পাঁচ হাজার ৫২টি পশু জেলার বাইরে বিক্রি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, জেলায় ১৯টি হাট বসেছে। ১৯টি হাটে ১৯টি মেডিকেল টিম পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করবে।
রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, রাঙামাটি পৌরসভার পক্ষ থেকে পরিবেশ দূষণ রোধে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক রাখতে পৌরসভার আওতাধীন নয়টি ওয়ার্ডের ৪২টি স্থানে পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, পশুর হাটগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি জাল টাকা সনাক্তে মেশিন বসানো হয়েছে। হাটে সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ফলমূলের জন্য যেমন বিখ্যাত, তেমনি স্থানীয় ‘রেড চিটাগাং’ জাতের গরুর জন্য বেশ কয়েক দশক ধরে সারাদেশে আলাদা সুনাম কুড়িয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস এ অঞ্চলে রেড চিটাগাং জাতের গরুগুলোর উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণে কাজ করছে।