খেলা

রেকর্ড গড়া জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল বাংলাদেশ

দুর্দান্ত বোলিংয়ে রেকর্ড গড়লেন মুস্তাফিজুর রহমান। আঁটসাঁট বোলিংয়ে তাকে দারুণ সঙ্গ দিলেন রিশাদ হোসেন। অল্পে গুটিয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র। রান তাড়ায় তাদের কোনো সুযোগই দিলেন না তানজিদ হাসান ও সৌম্য সরকার। অনায়াস জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল বাংলাদেশ।

টানা দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হার নিশ্চিতের পর যেন সম্বিৎ ফিরল বাংলাদেশ দলের। শেষ ম্যাচে তারা বোলিংয়ের পর দাপট দেখাল ব্যাটিংয়েও। টেক্সাসের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে শনিবার তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে সফরকারীরা জিতল ১০ উইকেটে।

এই সংস্করণে সবকটি উইকেট হাতে রেখে এটিই বাংলাদেশের প্রথম জয়। এর আগে ৯ উইকেটের জয় ছিল দুটি।

যুক্তরাষ্ট্রকে স্রেফ ১০৪ রানে আটকে রেখে ৫০ বল বাকি থাকতেই টপকে যায় বাংলাদেশ। বল বাকি রেখে জয়ের হিসাবেও বাংলাদেশের রেকর্ড এটি। ২০১৪ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪৮ বল বাকি থাকতে জয় পেয়েছিল তারা।

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মঞ্চটা গড়ে দেন মুস্তাফিজ। এই সংস্করণে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়ে মাত্র ১০ রানে ৬ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার। সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড গড়া রিশাদ ৪ ওভারে খরচ করেন মোটে ৭ রান।

সিরিজ জয় আগেই নিশ্চিত হওয়ায় এই ম্যাচের একাদশে অবশ্য বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আনে স্বাগতিকরা। নিয়মিত অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল, অলরাউন্ডার স্টিভেন টেলর এবং দুই ম্যাচে জয়ের নায়ক হারমিত সিং ও আলি খানকে দেওয়া হয় বিশ্রাম। দলকে নেতৃত্ব দেন অ্যারন জোন্স।

বাংলাদেশ একাদশেও আনা হয় জোড়া পরিবর্তন। দ্বিতীয় ম্যাচে বাদ পড়া লিটন কুমার দাসের সঙ্গে প্রায় ১০ মাস পর একাদশে ফেরেন হাসান মাহমুদ। তবে এদিন ওপেনিংয়ে নামানো হয়নি লিটনকে।

তুলনামূলক ছোট লক্ষ্যে ইতিবাচক শুরু করেন তানজিদ ও সৌম্য। প্রথম ওভারে দুটি চার মারেন তানজিদ। তৃতীয় ওভারে চারের পর ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন সৌম্য। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ করে ৪৮ রান।

পরেও একই ছন্দে এগিয়ে যান দুই ওপেনার। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তানজিদ। সাত ম্যাচের ক্যারিয়ারে তার তৃতীয় ফিফটি এটি। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৪২ বলে ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন ২৩ বছর বয়সী ওপেনার।

অভিজ্ঞ সৌম্য করেন ৪৩ রান। ২৮ বলের ইনিংসে ৪টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন তিনি। সবশেষ ২৬ ইনিংসে এটিই তার সর্বোচ্চ রান।

এই সংস্করণে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের চতুর্থ শতরানের জুটি এটি। তিনটিতেই জড়িয়ে সৌম্যর নাম। এর চেয়ে বড় জুটি আছে আর একটি। গত বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লিটন ও রনি তালুকদারের ১২৪ রান।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা যুক্তরাষ্ট্রও বেশ ভালো শুরু করে। ঝড়ো উদ্বোধনী জুটিতে ৫ ওভারের মধ্যে ৪৬ রান করে ফেলে তারা।

দ্বিতীয় ওভারে হাসানের বলে দুটি বাউন্ডারি মারেন শায়ান জাহাঙ্গির। পরের ওভারে সাকিব আল হাসানের বল ছক্কায় ওড়ান আন্দ্রেস গাউস। চতুর্থ ওভারে গাউসের কাছে ৪টি চার হজম করেন তানজিম হাসান।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারেও খরুচে শুরু করেন সাকিব। একটি করে চার-ছক্কায় প্রথম পাঁচ বলে দেন ১১ রান। তবে শেষ বলে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা গাউসকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।

৫ চার ও ১ ছক্কায় ১৫ বলে ২৭ রান করেন গাউস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের সাতশতম উইকেট এটি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৭০০ উইকেট ও ১৪ হাজার রানের ‘ডাবল’ স্পর্শ করা বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার তিনি।

উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর পথ হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। শুরুর পাঁচ ওভারে ৪৬ রান তোলা দলটি পরের পাঁচ ওভারে নিতে পারে মোটে ১০ রান। এই সময়ে একটি করে মেডেন ওভার করেন মুস্তাফিজ ও রিশাদ। পরপর দুই ওভারে ২টি উইকেট নেন মুস্তাফিজ।

দ্বাদশ ওভারে জোন্সকে ফিরিয়ে উইকেট মেডেন নেন তানজিম। এই সংস্করণে এক ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের ৩টি মেডেনের প্রথম কীর্তি এটি। এর আগে তিনটি ম্যাচে ২টি করে মেডেন ওভার করেছিল তারা।

পরের ওভারে মিলিন্দ কুমারের উইকেট নেন রিশাদ। সব মিলিয়ে চার ওভারে তার খরচ কেবল ৭ রান। বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটিই সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড। ২০১৪ সালে মাহমুদউল্লাহর চার ওভারে এক মেডেনসহ ৮ রানে ১ উইকেট ছিল আগের রেকর্ড।

ডেথ ওভারে বোলিংয়ে ফিরে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটিং লাইন-আপ ধসিয়ে দেন মুস্তাফিজ। শেষ দুই ওভারে দুটি করে উইকেট নেন তিনি। ইনিংসের শেষ বলে নিসার্গ প্যাটেলকে ক্যাচ আউট করে গড়েন বাংলাদেশের হয়ে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।

২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইলিয়াস সানির ১৩ রানে ৫ উইকেট ছিল এতদিনের রেকর্ড। প্রায় এক যুগ পর সেটি নিজের করে নিলেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি পেসার।

এই সংস্করণে দ্বিতীয়বার ৫ বা এর বেশি উইকেট পেলেন মুস্তাফিজ। এই কীর্তি গড়া দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার তিনি। প্রথম জন সাকিব আল হাসান। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুবার ৫ উইকেট নেওয়া বোলার ১৮ জন।

এমন বোলিংয়ের পর অনুমেয়ভাবেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন মুস্তাফিজ। তিন ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরার পুরস্কারও ওঠে তার হাতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

যুক্তরাষ্ট্র: ২০ ওভারে ১০৪/৯ (জাহাঙ্গির ১৮, গাউস ২৭, নিতিশ ৩, মিলিন্দ ৭, জোন্স ২, অ্যান্ডারসন ১৮, স্কালকয়েক ১২, জাসদিপ ৬, নিসার্গ ২, কেজিগে ১*; তানজিম ৪-১-৩২-১, হাসান ৩-০-১৯-০, সাকিব ৩-০-২৩-১, মুস্তাফিজ ৪-১-১০-৬, রিশাদ ৪-১-৭-১, মাহমুদউল্লাহ ২-০-১১-০)

বাংলাদেশ: ১১.৪ ওভারে ১০৮/০ (তানজিদ ৫৮*, সৌম্য ৪৩*; নেত্রাভাল্কার ২-০-২৫-০, জাসদিপ ২-০-১০-০, স্কালকয়েক ১-০-১৪-০, মিলিন্দ ৪-০-২৫-০, নিতিশ ১-০-১১-০, কেজিগে ১-০-১০-০, নিসার্গ ০.৪-০-৬-০)

ফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে যুক্তরাষ্ট্র ২-১ ব্যবধানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মুস্তাফিজুর রহমান

ম্যান অব দা সিরিজ: মুস্তাফিজুর রহমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d