লবণাক্ততা: চুল হারাচ্ছেন দেশের উপকূলের নারীরা
লবণাক্ত পানির প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা নিয়মিতই হারাচ্ছেন মাথার চুল, সেই সঙ্গে বাড়ছে সংক্রামক রোগ। দূর-দূরান্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করলেও গোসলসহ অন্যসব পরিচ্ছন্নতার কাজের জন্য লবণাক্ত পানির উপরই নির্ভর করে থাকতে হয় এই নারীদের।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির উৎস ক্রমশ কমে যাচ্ছে, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নারীদের উপর। বাংলাদেশের প্রান্তিক এলাকায় বিশুদ্ধ পানির জন্য মহিলাদের দূর-দূরান্তে যেতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে গোসল সহ অন্যান্য পরিষ্কারের কাজের জন্য লবণাক্ত পানিই ব্যবহার করেন তারা। যার ফলে প্রধান সমস্যা হিসেবে তাদের চুল পড়ার হার ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে এবং মাথার ত্বকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ এমনকি ইনফেকশনে আক্রান্ত হচ্ছেন।
সাতক্ষীরার ভেটকালি গ্রামের ধান ও মাছ চাষী শ্যামলী মুন্ডা বলেন, লবণাক্ত পানিতে গোসলের ফলে ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যায় এবং শরীরে প্রায়ই ফোসকার মত পড়ে। ফোসকা কখনও এত শুকিয়ে যায় যে সেখান থেকে রক্তপাতও হয়।
সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকা ফসল উৎপাদন এবং মাছ ধরা। সেখানকার অন্যান্য নারীরা জানায়, যেখানে লবণাক্ততা বেশি সেখানকার মহিলারা অন্যান্য অঞ্চলের থেকে বেশি মাত্রায় চুল হারান। অনেকে অকাল টাক হয়ে যাচ্ছেন। তাই সংসারের প্রয়োজনে তাদের পড়ে যাওয়া চুলগুলো তারা বিক্রি করে চাল-ডাল সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে থাকেন।
তিন সন্তানের জননী শ্যামলী বলেন, আবহাওয়ার কারণে ধানের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বাজারের জন্য আর কোন উপায় না পেয়ে চুল বিক্রি করা হয়ে থাকে। চুল বিক্রি করে প্রতিবার ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পাওয়া যায়।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বিষয়ক প্রোগ্রামের প্রধান অনিন্দিতা হৃদিতা জানান, সাতক্ষীরা অঞ্চলের মহিলারা বিশুদ্ধ পানি, নিরাপদ স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধির মৌলিক বিষয়গুলি ছাড়াই জীবনযাপন করছেন এবং জলবায়ু সংকটের ফলে এই বিষয়গুলো আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
গ্রামাঞ্চলের নারীদের বিয়ের সময় তাদের শারীরিক সৌন্দর্যের উপর বেশি নজর দেয়া হয়। ফলে মেয়েদের অকালে চুল পড়ে গেলে তাদের পরিবার বিয়ে নিয়ে শঙ্কায় থাকেন। বিবাহিত নারীরাও তাদের চুল পড়ে যাওয়া নিয়ে স্বামীর কাছে অপমানিত বোধ করেন এবং সংসার নিয়ে সংশয়ে থাকেন।