জাতীয়

লুট ৪৬ চায়না রাইফেল, ৯৪ পিস্তল, ২৮৪ ম্যাগজিন, ৫৫৬৩ রাউন্ড গুলি

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট নগরীর থানা ও পুলিশ ফাঁড়িগুলোতে হামলা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। এ সময় নগরীর ছয়টি থানা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। অস্ত্রাগার ভেঙ্গে লুট করা হয় অস্ত্র ও গুলি। বেলা তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে একযোগে থানাগুলোতে আগুন দেয়া হয়। নগরীর ষোল থানার মধ্যে সাতটি থানা অক্ষত থাকলেও বাকি দশটি থানায় আগুন দেয়া হয়। এরমধ্যে আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি ছয়টি থানায় সবচেয়ে বেশি লুটপাট করা হয়। থানাগুলো হলো- কোতোয়ালী, পাহাড়তলী, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও হালিশহর। এসব থানার অস্ত্রাগার ভেঙ্গে লুট করা হয় অস্ত্র। উল্লেখযোগ্য অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে আমেরিকা ও ইটালির তৈরি ৬৫টি নাইন এম এম তারাশ পিস্তল, ৪৬টি চায়না রাইফেল, ৯৫টি শর্টগান, ২৯টি সেভেন পয়েন্ট ৬২ পিস্তল, ১৭৬৩ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ৩৮’শ চায়না রাইফেলের গুলিসহ নানা অস্ত্র। এর বাইরে রয়েছে গ্যাসহ্যান্ড গ্রেনেড, গ্যাসগান, টিয়ার গ্যাসহ্যান্ড গ্রেনেড। ছয়টি থানায় দায়ের করা মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডমিন এন্ড ফাইন্যান্স) আ স ম মাহতাব উদ্দিন জানান, খোয়া যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে বেশ কিছু ইতিমধ্যে উদ্ধার হয়েছে। বাকিগুলো উদ্ধারে কাজ চলছে।

কোতোয়ালী থানা : এ থানার অস্ত্রাগারের তালা ও দেয়াল ভেঙ্গে যেসব অস্ত্র লুট করা হয়েছে তা হলো, নাইন এমএম তারাশ পিস্তল ২৩টি, পিস্তলের ম্যাগজিন ৬৩টি, গুলি ৫৫৭টি, চায়না রাইফেল তিনটি, রাইফেলের গুলি ২৬৮ রাউন্ড, চায়না এসএমজি দুটি, ম্যাগজিন দুটি, গুলি ৬০ রাউন্ড, ১২ বোর শর্টগান ১০টি, শর্টগানের কার্তুজ ২১৮২ রাউন্ড, শর্ট ও লং রেঞ্জ সেল ১০টি ও সাউন্ড গ্রেনেড ১০টি। এ ব্যাপারে গত ২২ আগস্ট ৪০ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রিপন কুমার দাস।

পাহাড়তলী থানা: এ থানায় গত ২৪ আগস্ট ১৫ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন এসআই এনামুল হক। লুট হওয়া অস্ত্রগুলো হল, নাইন এমএম তরাশ পিস্তল ১০টি, পিস্তলের ম্যাগজিন ২০টি, পিস্তলের গুলি ২০০ রাউন্ড, সেভেন পয়েন্ট ৬২ পিস্তল ১০টি, পিস্তলের ম্যাগজিন ২০টি, গুলি ১৬০ রাউন্ড, চায়না রাইফেল ১৪টি, চায়না এসএমজি চারটি, এসএমজির ম্যাগজিন ১০টি, শার্টগান ৩০টি, শর্টগানের ম্যাগজিন ১০টি, গ্যাসগান চারটি, চায়না রাইফেলের গুলি ৫৬০ রাউন্ড, চায়না এসএমজির গুলি ৩০০ রাউন্ড, শর্টগানের রাবার কার্তুজ ৩৮৪ রাউন্ড, লেডবল কার্তুজ ১২০০ রাউন্ড, গ্যাস সেল লং রেঞ্জ ৬০টি, শর্ট রেঞ্জ ৪০টি, সাউন্ড গ্রেনেড ৪০টি, টিয়ার গ্যাসহ্যান্ড গ্রেনেড ৩৫টি, টিয়ার গ্যাস স্প্রে দুটি। এছাড়া থানায় সাধারণ মানুষের জমা দেয়া অস্ত্রের মধ্যে ১০টি এক নলা বন্দুক, সাতটি রিভলবার, পাঁচটি পিস্তল, একটি ২২ বোরের রাইফেল এবং ৩৬৮ রাউন্ড গুলি।

পতেঙ্গা থানা: এ থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ এনে পতেঙ্গা থানায় গত ২৪ আগস্ট ২৫ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন এসআই কে এম নাজিবুল ইসলাম তানভীর। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা থানার অস্ত্রাগার, এয়ারপোর্ট পুলিশ ফাঁড়ি, টানেলের নিরাপত্তা গার্ড, এসএফের অস্ত্র ও গুলি, বেসরকারি (জমা রাখা অস্ত্র) অস্ত্র লুট করে। লুট করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে, নাইন এম এম তারাশ পিস্তল নয়টি, পিস্তলের ম্যাগজিন ১৯টি, গুলি ১৭৯ রাউন্ড, সেভেন পয়েন্ট ৬২ পিস্তল সাতটি, ম্যাগজিন ১৫টি, পিস্তলের গুলি ৯০ রাউন্ড, চায়না রাইফেল ১৫টি, রাইফেলের গুলি ৫১৩ রাউন্ড, চায়না এসএমজি ছয়টি, এসএমজির ম্যাগজিন ২৩টি, গুলি ৭২০ রাউন্ড, ১২ বোর শর্টগান ৩০টি, শর্টগানের ম্যাগজিন নয়টি, কার্তুজ ১৩১৭ রাউন্ড, গ্যাসগান নয়টি, টিয়ার সেল লান্সার ছয়টি, লং রেঞ্জ সেল ৭৫টি, শর্টরেঞ্জ সেল ১১টি, সাউন্ড গ্রেনেড চারটি, টিয়ারগ্যাস হ্যান্ড গ্রেনেড আটটি। এছাড়া সাধারণ মানুষের জমা রাখা বিভিন্ন ধরনের নয়টি বন্দুক ও গুলি লুট করা হয়েছে।

ডবলমুরিং থানা: এ থানা থেকে যেসব অস্ত্র লুট করা হয়েছে তা হলো- তারাশ পিস্তল ১০টি, পিস্তলের ম্যাগজিন ১১টি, গুলি ১০৯ রাউন্ড, চায়না এসএমজির গুলি ২২৫ রাউন্ড, শর্টগানের কার্তুজ ৮৯২ রাউন্ড, লং রেঞ্জ শেল চারটি, শর্টরেঞ্জ শেল দুটি ও টিয়ার গ্যাস হ্যান্ড গ্রেনেড ৬ রাউন্ড। এছাড়া সাধারণ মানুষের জমা রাখা চারটি পিস্তল, একটি এক নলা ও একটি দুই নলা বন্দুক এবং ৯৪ রাউন্ড গুলি লুট করা হয়। এ ব্যাপারে গত ২৭ আগস্ট ১২ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এসআই ইমাম হোসেন।

ইপিজেড থানা: এ থানার অস্ত্রাগার, সিইপিজেড ও নিউ মুরিং পুলিশ ফাঁড়ি থেকে যেসব অস্ত্র ও গুলি লুট করা হয়েছে তা হলো, নাইন এমএম পিস্তল সাতটি, পিস্তলের গুলি ১৭৪ রাউন্ড, ম্যাগজিন ১৭টি, সেভেন পয়েন্ট ৬২ পিস্তল ছয়টি, গুলি ১১৯ রাউন্ড, ম্যাগজিন ১৫টি। চায়না রাইফেল ১১টি, রাইফেলের গুলি ৪৩৬ রাউন্ড, চায়না এসএমজি চারটি, এসএমজির গুলি ৩০০ রাউন্ড, ম্যাগজিন ২৬টি, শর্টগান ৪৫টি, শর্টগান কার্তুজ ৩১৭৮ রাউন্ড, গ্যাসগান ১২টি, গ্যাস সেল লং রেঞ্জ ১৪২ রাউন্ড, শর্ট রেঞ্জ ১১৩ রাউন্ড, টিয়ার সেল ছয়টি, সাউন্ড গ্রেনেড ১৯টি, গ্যাস হ্যান্ড গ্রেনেড ২০টি ও এক নলা বন্দুক একটি। এ ব্যাপারে গত ২২ আগস্ট অজ্ঞাতনামা ৩০ হাজার জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন এসআই শাকিলুর রহমান।

হলিশহর থানা: এ থানার অস্ত্রাগার থেকে যেসব অস্ত্র ও গুলি লুট করা হয়েছে তা হলো- নাইন এম এম তারাশ পিস্তল ছয়টি, পিস্তলের ম্যাগজিন ১২টি, পিস্তলের গুলি ৯৮ রাউন্ড, সেভেন পয়েন্ট ৬২ পিস্তল ছয়টি, পিস্তলের ম্যাগজিন ১০টি, পিস্তলের গুলি ৭৭ রাউন্ড, চায়না এসএমজি একটি, শর্টগান একটি, চায়না রাইফেলের গুলি ৯০ রাউন্ড, শর্টগানের কার্তুজ ৫১৮ রাউন্ড, গ্যাস সেল লং রেঞ্জ একটি, সাউন্ড গ্রেনেড দুটি, টিয়ার গ্যাস হ্যান্ড গ্রেনেড একটি। এ ব্যাপারে গত ২৭ আগস্ট ১৬ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হালিশহর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এসআই তৌফিকুল ইসলাম।

এছাড়া বন্দর থানার হালিশহর পুলিশ ফাঁড়ি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ফাঁড়ি থেকে একটি শর্টগান, ১১ রাউন্ড কার্তুজ ও ৫ রাউন্ড গুলি লুট করা হয়। এ ব্যাপারে ছয় হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এসআই কিশোর মজুমদার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d