জাতীয়

শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্বীকৃতি পেলেন মধুর ক্যান্টিনের মধুদা

শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্বীকৃতি পেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের মধুসূদন দে। মুক্তিযুদ্ধ-পূর্বকালে মধুর ক্যান্টিনের সবার প্রিয় ছিলেন মধুদা, তিনিই পেলেন মরণোত্তর এ স্বীকৃতি। তিনি ছিলেন একজন চা-দোকানি। পর্যায়ক্রমে এ চা-দোকানি নিজেকে স্বাধিকার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভূমিকার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে নেন। ছাত্রদের কর্মসূচি থেকে শুরু করে নানা কাজে তিনি তাদের সহযোগিতা করেছেন।

গতকাল রবিবার চতুর্থ ধাপে নতুন করে আরও ১১৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই তালিকাতেই ব্যতিক্রম ও বিশেষ বিবেচনায় মধুদাকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ নিয়ে চার ধাপে ৫৬০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক চতুর্থ ধাপে ১১৮ জন বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করেন।

তালিকা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকার ক্ষেত্রে আমরা দুয়েক জায়গায় ব্যতিক্রম করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুদা শিক্ষক, লেখক বা গবেষক নন। তবে তিনি এমন একজন মানুষ যাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই চিনত। দেশের স্বাধীনতা-সংক্রান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যত আন্দোলন হয়েছে, সবগুলোতেই তার ভূমিকা ছিল।’

মন্ত্রী বলেন, তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এমন কিছু ব্যক্তির নাম বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। মধুদা সাধারণ একজন চায়ের দোকানদার ছিলেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, তিনি বুদ্ধিজীবী কী করে? দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে যত নেতাকর্মী দেশের জন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন, উনি তাদের সহযোগিতা করেছেন। বিনা পয়সায় চা খাইয়েছেন। মিটিং-মিছিলে সহযোগিতা করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সই করা একটা সনদও তার আছে, যেখানে বঙ্গবন্ধু তাকে (মধুদা) বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

তালিকায় মধুসূধন দে বা মধুদার বাবার নাম লেখা হয়েছে আদিত্য চন্দ্র দে, মায়ের নাম লেখা হয়েছে যোগমায়া দে। গ্রাম বা মহল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, থানা রমনা, জেলা ঢাকা।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে সব ছাত্রনেতাই মধুর ক্যান্টিনে বসে রাজনৈতিক কাজকর্ম চালিয়েছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তান-পর্বে তার রেস্তোরাঁয় অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পরিকল্পনা হয়েছে। এ কারণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শত্রুতে পরিণত হন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে জগন্নাথ হল থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং সে রাতেই হত্যা করে।

চতুর্থ ধাপের শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকায় তিনজন সাহিত্যিক, একজন বিজ্ঞানী, একজন চিত্রশিল্পী, ৫৪ জন শিক্ষক, চারজন আইনজীবী, ১৩ জন চিকিৎসক, তিনজন প্রকৌশলী, আটজন সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, নয়জন রাজনীতিক ও ১৩ জন সমাজসেবী রয়েছেন। এ ছাড়া সংস্কৃতিসেবী এবং চলচ্চিত্র, নাটক, সংগীত ও শিল্পকলার অন্যান্য শাখার সঙ্গে নয়জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রথম ধাপে ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল ১৯১, দ্বিতীয় ধাপে ২০২২ সালের ২৯ মে ১৪৩, তৃতীয় ধাপে এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ১০৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করে সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d