চট্টগ্রামরাজনীতি

শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে বিএনপি-জামায়াত, নাশকতার নির্দেশ তারেকের: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চেপে বসেছে বিএনপি-জামায়াত। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আন্দোলনটা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে তারা।

তারেক রহমান লন্ডন থেকে ছাত্রদল-যুবদল ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ে নাশকতা করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে এবং যে যত বেশি নাশকতা করবে, তাকে তত বেশি পুরস্কৃত করা হবে বলে ঘোষণা দিচ্ছে। আমাদের কাছে সেই তথ্য প্রমাণ আছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মাথার ওপর হাত বুলিয়ে যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তারা এখন বিএনপি-জামায়াতের পকেটে ঢুকে গেছে। বুধবার রাতে তাদের প্রেসক্রিপশনেই বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অতীতেও আমরা দেখেছি কোটা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কথা বলে অনেকে হাজির হয়েছিল, পরে তাদের মোবাইল চেক করে পাওয়া গেছে, লক্ষ-কোটি টাকা তাদের বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঠানো হয়েছে। এখন তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তারা নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। এবারও কোটা আন্দোলনের নেতাদের কাউকে কাউকে বিএনপি-জামায়াত পকেটে পুরে ফেলেছে।

বৃহস্পতিবার (১৮জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে কোটাকে ইস্যু করে দেশব্যাপী বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বক্তব্যে সমস্ত ঘটনার বিচার হবে, যারাই দোষী হবেন তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে, কোটা প্রথার বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে তারা একটি সুফল পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, আন্দোলনকারীরা আদালতে ন্যায় বিচার পাবে সেই ঈঙ্গিত দিয়েছেন। ইতিমধ্যে কোটা প্রথার বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছিল আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের পক্ষেই লড়ছে, তাদের পক্ষেই কথা বলছে। সরকার যে কোটা প্রথা বাতিল করেছিল, সেটি হাইকোর্ট পুনর্বহাল করে, রাষ্ট্রপক্ষ আবার আপিল বিভাগে গিয়ে সেটির ওপর স্থগিতাদেশ আনে। অর্থাৎ সরকার যে কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিল সেটি এখনো বলবৎ আছে। যেহেতু আপিল বিভাগে শুনানি হবে, সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ার আধঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে আজ বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এটি কোটার বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে তাদের কর্মসূচি নয়, এটি বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি। এবং তারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঘাড়ের ওপর চেপে বসে তাদের বিভ্রান্ত করছে। কোটা প্রথার বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে তাদের মাঝে এই কর্মসূচি নিয়ে কোনো ঐকমত্য ছিল না। দুয়েকজনকে ভাগিয়ে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত তাদের মাধ্যমে এ কর্মসূচি দিয়েছে।

কোটার বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে তাদের হাতে আন্দোলনের চাবিকাঠি নাই উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, এখন বিএনপি-জামায়াত তাদের নিয়ে খেলছে। রাস্তায় রাস্তায় ৩০-৩৫ বছরের বয়স্ক বাচ্চার বাবারা লাঠিসোঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তারা তো ছাত্র নয়, তারা বিএনপি জামায়াতের কর্মী। কারো কারো দাঁড়িতে একটু পাকও ধরেছে। ঢাকা শহরে আশপাশের জেলা থেকে বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসীদের এনে জড়ো করা হয়েছে। ২০১৩ এবং ১৪-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে নৈরাজ্য করেছিল ঠিক একই কায়দায় বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন চট্টগ্রামে কীভাবে ছাদের ওপর থেকে ছাত্রলীগের ছেলেদের ফেলে দেওয়া হয়েছে, কয়েকজন মৃত্যুর সাথে ছটফট করছে, একজন মৃত্যুবরণ করেছে। সারাদেশে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছে। তারা ভেবেছে এভাবে পার পেয়ে যাবে। প্রতিটা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সময়মতো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, আমরা রাজপথ পাহারা দিয়েছি ভোটের আগে, ভোটের পর তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান কমান্ডের নেতাকর্মীদের সবাই মিলে আমাদের রাজপথ পাহারা দিতে হবে, দেশ পাহারা দিতে হবে, দেশ পাহারা দিয়ে এই সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা বুকের রক্ত ঢেলে এই দেশ স্বাধীন করেছেন, দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারে বাঙালি সচিব ছিল একজন। মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছেন বলেই আমরা সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখি, সরকারি চাকরি পায়। তাই মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা কখনো কাম্য নয়। সেটির দেশের মানুষ মেনে নিতে পারে না।

তিনি বলেন, বুঝতে হবে কোন বিষয় যখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকে তখন সরকারের পক্ষে নির্বাহী আদেশে কিছু করার থাকে না। সে ক্ষেত্রে আদালতের আদেশ অমান্য করা হয়, সেটি সংবিধান পরিপন্থী এবং আইন আদালত পরিপন্থী। সরকার চেষ্টা করছে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে এটির যাতে একটি যৌক্তিক সমাধান হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সরওয়ার মনির সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহের হোসেন চৌধুরী এমপি, শামীমা হারুন লুবনা এমপি, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আশিকুন্নবী চৌধুরী শাওন, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন চৌধুরী, লায়ন হায়দার আলী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d