চট্টগ্রাম

শীঘ্রই চালু হবে হলিডে মার্কেট, তালিকা হচ্ছে প্রকৃত হকারদের

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহরের সড়ক-ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত রাখার পাশাপাশি হকারদের পুনর্বাসনে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরলেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। মাসব্যাপী অভিযান চালিয়ে নিউ মার্কেট, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় হকার উচ্ছেদের পর মেয়র জানালেন, নীরবে হকারদের তালিকা করা হচ্ছে। শীঘ্রই নিউ মার্কেট, আগ্রাবাদ ও বায়েজিদ এলাকায় প্রকৃত হকারদের জন্য হলিডে মার্কেট চালু করবে সিটি কর্পোরেশন।

নগর পিতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে দৈনিক পূর্বকোণের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব পরিকল্পনা তুলে ধরেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। আলাপচারিতায় হকার প্রসঙ্গ ছাড়াও নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, পে-পার্কিং চালু, খেলার মাঠ তৈরি, তারের জঞ্জাল অপসারণ, সিডিএসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার সঙ্গে চসিকের সমন্বয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। প্রশ্ন-উত্তর আকারে পূর্বকোণ পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

পূর্বকোণ: আপনি হকারদের জন্য হলিডে মার্কেটের একটি পরিকল্পনা ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছেন। এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
মেয়র: হকার পেশার সাথে যারা জড়িত তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। তারা যাতে কষ্ট না পায়, তাদের জন্য হলিডে মার্কেটের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে শুরু করে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত, শুক্রবার ও শনিবার সারাদিন ও রাতে তারা ব্যবসা করতে পারবে। হলিডে মার্কেটের উপযোগী লাইট ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে সরবরাহ করবো। হলিডে মার্কেট চালু হলে শহরের শৃঙ্খলা আসবে, যানজটমুক্ত ও সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করবে এবং ফুটপাতগুলো দখল মুক্ত হবে।

পূর্বকোণ: হলিডে মার্কেটের জন্য কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে?
মেয়র: ইতোমধ্যে হলিডে মার্কেটের জন্য আমরা কিছু জায়গা নির্ধারণ করেছি। এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। অতিসত্বর এটির একটি ফল পাবো আমরা। নিউ মার্কেট এলাকায় হলিডে মার্কেটের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করেছি। রেলওয়ের খালি জায়গা যেখানে আছে, সেখানে হলিডে মার্কেট হবে। আমরা স্থায়ীভাবে কারো জায়গা ব্যবহার করতে পারবো না। অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্য নেব। আগ্রাবাদ ও বায়েজিদ এলাকায়ও হকারমুক্ত করেছি। সেখানেও হলিডে মার্কেট করা হবে।

পূর্বকোণ: আপনারা হকারদের তালিকা কীভাবে করবেন?
মেয়র: হকারদের তালিকা করা একটি জটিল ব্যাপার। তারপরও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে নীরবে জরিপ শুরু করেছে। প্রকৃত হকারদের নাম ও তালিকা সংগ্রহের কাজ করছি। প্রয়োজনে হকারদের সংগঠনের যে নেতৃবৃন্দ রয়েছে, আমরা তাদের নিয়েও বসবো।

পূর্বকোণ: আসন্ন বর্ষায় নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত রাখতে চসিক কী ভূমিকা পালন করবে?
মেয়র: আসন্ন বর্ষাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের প্রকল্প পরিচালকের সাথে আমি নিজেও বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। আমাদের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন।
চাক্তাইখালসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ খাল থেকে এই মাসের মধ্যে মাটি ও নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে ফেলবে বলে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যার কারণে বিগত বছরের মত জলাবদ্ধতা হবে না বলে আমরা আশা করছি। হয়তো পানি উঠবে, তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি সরে যাবে।

পূর্বকোণ: সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ৩৬ খালের বাইরে আরো যে ২১টি খাল রয়েছে। সেগুলো নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের পরিকল্পনা কী?
মেয়র: এই ২১টি খালের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করার জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার আহŸান করেছি। শীঘ্রই আমরা কন্সালটেন্ট নিয়োগ করবো।

পূর্বকোণ: নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাই।
মেয়র: প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর হালিশহরের এইচ বøকে কিড্স জোন ও খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। হাউজিং সোসাইটি মাঠ যেটি বিডিআর মাঠ নামে পরিচিত। সেটির কাজও চলছে। সেখানেও দুই কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে। মাঠের সাথে আমরা সেখানে ওয়াকওয়েও করছি। বাকলিয়ায়ও মাঠ সংস্কার করেছি। সেখানেও শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিশু-কিশোররা খেলার সুযোগ পাচ্ছে। চান্দগাঁওয়ে স্পোর্ট জোন করেছি। সেখানে ফুটবল-ক্রিকেটের জন্য আলাদা আলাদা কোট করেছি। সেখানে আবার উন্মুক্ত মঞ্চও করেছি।

পূর্বকোণ: নগরীর বহুতল ভবনে পার্কিং না রাখায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে চসিক কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?
মেয়র: পার্কিং এর ব্যাপারে সিডিএকে কঠোর হতে হবে এবং এজন্য আমি সিডিএকে একটি প্রস্তাব দিয়েছি। সিডিএ যেসব ভবনের অনুমোদন দেয়, তা যদি চসিকের সাথে সমন্বয় করে দেয়া হতো, তাহলে অনেক অসংগতি দূর হতো। অনেকেই সড়ক থেকে ৫-৭ দূরে ভবন নির্মাণের প্ল্যান নেয়। কিন্তু তারা সড়কের সাথে ঘেঁষেই ভবন নির্মাণ করে। এসব দেখার কেউ নেই। এসব প্ল্যান যদি সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় করে দেয়া হয়, তাহলে এসব আমাদের নজরে থাকতো। অনেক ভবন মালিক ফুটপাতকে দখল করে ভবনের ভিতর ঢুকিয়ে ফেলে। প্রতি বছর শহরে বড় বড় মার্কেট নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু তারা পর্যাপ্ত পার্কিং রাখে না। তাদের গাড়ি সড়কে বা ফুটপাতে রাখে। যার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এই ব্যাপারে আমাদের কঠোর হতে হবে। এইসব গাড়ির কারণে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যেসব মার্কেটে পার্কিং নেই, তাদের অবশ্যই পার্র্কিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। পার্কিং এর স্থানে কোন দোকান থাকলে সেগুলো সিলগালা করে দেয়া হবে। এছাড়া, আমাদের সড়কে যেসব গাড়ি থাকে সেগুলো পার্কিং এর জন্য পে-পার্কিং এর ব্যবস্থা করেছি। পাইলট প্রকল্প হিসেবে আগ্রাবাদে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে পে-পার্কিং আমরা পুরো শহরে চালু করবো।

নগরীকে তারের জঞ্জাল থেকে মুক্তি দিয়ে সম্প্রতি একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছেন উল্লেখ করে চসিক মেয়র রেজাউল করিম বলেন, পুরো শহর তারের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। কয়েকদিন আগেই আমরা সামিট গ্রুপের সাথে চুক্তি করেছি। নগরীকে তারের জঞ্জাল থেকে মুক্তি দিতে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। পাইলটিং প্রকল্পের অংশ হিসেবে লালখানবাজার, জামালখান, বাগমনিরাম ওয়ার্ডে উপরে কোন তার থাকবে না। সবগুলো তার মাটির নিচ দিয়ে যাবে। ধীরে ধীরে সমস্ত চট্টগ্রামের তার মাটির নিচ দিয়ে নেয়া হবে।

ফুটপাতকে দখলমুক্ত করার প্রসঙ্গে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি এবং তাদের মধ্যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভও বিরাজ করছে। যেহেতু আমি রাজনীতি করি, সহজেই মানুষের ভাষা বুঝি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গেলে একই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ফুটপাতগুলো দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে। এই ফুটপাত দিয়ে আমাদের ছাত্রছাত্রী, বৃদ্ধ, নারী-শিশু হাটতে পারে না। এই ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে পথচারীদের জন্য। তাই এই ফুটপাতে যাতে পথচারীরা নির্বিঘ্নে-নিরাপদে ব্যবহার করতে পারে সেই জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি।
অনেকেই এটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে। অনেকেই বলছে, হকারকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আমি হকার উচ্ছেদ করছি না। আমার কথা হলো ফুটপাতে কেউ বসতে পারবে না। হকার হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মালামাল বিক্রি করবে। ফুটপাত দখল করে স্থায়ীভাবে দোকান করার নাম হকার নয়। একটি শ্রেণি এই পেশাকে পুঁজি করে ব্যবসা করছে। সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন নিয়ে আমি এই কাজে হাত দিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d