জাতীয়

শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে নতুন ঋণ পাবে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান

শ্রমিকদের গত আগস্ট মাসের বেতন-ভাতা দিতে ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ পাবে সচল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। সহজ শর্তে এই মেয়াদি ঋণসুবিধা চালু করার বিষয়ে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আজ রোববার এক নির্দেশনায় বলেছে, সাম্প্রতিক অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়িক পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানার উৎপাদন কার্যক্রম ও রপ্তানি মূল্য যথাসময়ে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক–কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এ জন্য উৎপাদনসক্ষমতা বজায় রেখে রপ্তানির গতিধারা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

কোন কোন প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে আলাদা করে ঋণ পাবে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান মোট উৎপাদনের ৮০ শতাংশ রপ্তানি করে, তারা রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান শ্রমিক-কর্মচারীদের গত মে থেকে জুলাই পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করেছে, সেগুলোকে সচল বলে বিবেচনা করা হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের সচল ও রপ্তানিমুখী হওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনের প্রত্যয়নপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ঋণসুবিধার পরিমাণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের গত তিন মাসের গড় বেতন-ভাতার বেশি হবে না। ঋণের বিপরীতে বাজারভিত্তিক প্রচলিত সুদহার প্রযোজ্য হবে। ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীর মুঠোফোনে আর্থিক সেবা বা এমএফএসসহ ব্যাংক হিসাবে সরাসরি আগস্ট মাসের বেতন-ভাতার অর্থ দেবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে এই ঋণসহ গ্রাহকের মোট ঋণ একক ঋণসীমার মধ্যে থাকতে হবে। এই ঋণের অর্থ মেয়াদি ঋণ আকারে তিন মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ এক বছরে সমান কিস্তিতে আদায় করতে পারবে ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতার জন্য চলতি মূলধন ঋণ দেয় ব্যাংক। তবে এখন বেতন-ভাতার জন্য আলাদা করে নতুন ঋণ দিতে পারবে। তার জন্য অতিরিক্ত মাশুল দিতে হবে না। যদিও ব্যবসায়ীরা বেতন-ভাতার জন্য তহবিল গঠনের দাবি করেছিলেন। তহবিল করলে বিপুল অঙ্কের টাকা ছাপাতে হতো। তাতে আবার মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তৈরি পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে দেখা করে রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের এক মাসের মজুরি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সহজ শর্তে ঋণ দাবি করেন। তার আগে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে একই দাবি করেন বিজিএমইএর নেতারা।

করোনাকালে রপ্তানিমুখী কারখানার শ্রমিকদের মজুরি দিতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল করেছিল তৎকালীন সরকার। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই এবারের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d