শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে হারের বৃত্ত থেকে বের হলো অস্ট্রেলিয়া
হারের বৃত্তে দুই দলই সমান ছিল। অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা দুই দলই দুটি ম্যাচে টানা হেরেছে। আজকের ম্যাচে অবশ্য এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। তারা লঙ্কানদের হারিয়েছে ৫ উইকেটের ব্যবধানে। তবে হারের বৃত্তে ঝুলেই রইলো শ্রীলঙ্কা।
প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল তারা। অথচ চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের খেসারত দিতে হয় তাদের। অন্যদিকে দুই ম্যাচ পরই অবশেষে জয়ের ধারায় ফিরলো পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২০৯ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ২১০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে আবারো শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অজিরা। ২৪ রানের মধ্যে তারা হারিয়ে বসেছে দুই ব্যাটিং স্তম্ভ ডেভিড ওয়ার্নার আর স্টিভেন স্মিথকে।
এক ওভারে জোড়া শিকার করেছেন দিলশান মাদুশঙ্কা। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে ওয়ার্নার (৬ বলে ১১) আর শেষ বলে স্মিথকে (৫ বলে ০) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন লঙ্কান এই পেসার।
২৪ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে অজিরা। সেখান থেকে অজিদের উদ্ধার করেন অভিজ্ঞ মারনাস লাবুশেন ও মিচ মার্শ। চাপ কমাতে মারমুখী হয়ে উঠেন মিচেল মার্শ। ৩৯ বলেই ফিফটি তুলে নেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তবে তার মারকুটে ইনিংসটি থেমেছে রানআউটে কাটা পড়ে। দুই নিতে গিয়ে রানআউট হন মার্শ। ৫১ বলে তার ৫২ রানের ইনিংসে ছিল ৯টি বাউন্ডারির মার।
তৃতীয় উইকেট জুটিই মূলত জয়ের ভিত গড়ে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে। মারনাস লাবুশেনকে সঙ্গে নিয়ে ৭৭ রানের অনবদ্য এক জুটি গড়েন জশ ইংলিশ। বেশ দেখে শুনেই শ্রীলঙ্কান স্পিনারদের মোকাবেলা করছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান।
তবে ব্যাটিং দেখে এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল লাবুশেন হাফসেঞ্চুরি তুলে নিবেন কিন্তু তার আগেই ৪০ রানে তাকে আউট করেন সেই মাদুশাঙ্কা। ৬০ বলের ইনিংসে তিনি দুটি চার মারেন। লাবুশেন আউট হলেও অন্য প্রান্তে ঠিকই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ইংলিশ। তবে তাকে শেষ দিকে ফেরান ওয়েলালাগে। ৫৯ বলে ৫৮ রান করা ইংলিশের ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ১টি ছয়ের মার।
৬ষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নেমে শ্রীলঙ্কান বোলারদের বেধরক মারতে থাকেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তার ব্যাটিং ২১ বলে ৩১ রানের টর্নেডো ইনিংস অজিদের ১৬ ওভার বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়। স্টইনিস ২০ রানে অপরাজিত থাকেন। লঙ্কানদের হয়ে মাদুশাঙ্কা ৩টি ও ওয়েলালাগে ১টি করে উইকেট পান।
এর আগে লখনৌতে গুরুত্বপূর্ণ এই লড়াইয়ে টসভাগ্য সহায় হয়েছে শ্রীলঙ্কার। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দাসুন শানাকার চোটে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া কুশল মেন্ডিস।
ওপেনিং জুটিতে দারুণ সূচনা পায় লঙ্কানরা। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের পাত্তা না দিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ১২৫ রান তুলে ফেলেন পাথুম নিশাঙ্কা আর কুশল পেরেরা। অবশেষে ২২তম ওভারে এসে উইকেটের দেখা পায় অস্ট্রেলিয়া। জুটি ভাঙেন অসি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।
কামিন্সকে হুক করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ডেভিড ওয়ার্নারের দুর্দান্ত এক ক্যাচ হন নিশাঙ্কা। ৬৭ বলে ৬১ রানের ইনিংসে ৮টি বাউন্ডারি হাঁকান লঙ্কান ওপেনার।
এরপর আরেক সেট ব্যাটার কুশল পেরেরাকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন কামিন্স। ৮২ বলে ১২ বাউন্ডারিতে পেরেরার ব্যাট থেকে আসে ৭৮ রান।
উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে ব্যক্তিগত ৯ রানেই সাজঘরে ফেরান তিনি। পরের ওভারে সাদিরা সামারাবিক্রমাকে (৮) ফেলেন এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে। ৯ রানের মধ্যে ৩টি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা।
৩২.১ ওভারে ৪ উইকেটে শ্রীলঙ্কা ১৭৮ রান তোলার পর বৃষ্টির জন্য কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ ছিল। খেলা শুরু হতে না হতেই আরও দুটি উইকেট হারিয়ে বসেছে লঙ্কানরা।
মিচেল স্টার্কের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (৭), এরপর রানআউটের কবলে পড়েছেন দুনিথ ওয়াল্লালাগে (২)।
চামিকা করুনারত্নে (২) আর মাহিশ থিকশানাকে (০) এলবিডব্লিউ করেন জাম্পা। লাহিরু কুমারা (৪) হন স্টার্কের বলে বোল্ড। পাঁচ নম্বর ব্যাটার চারিথ আসালাঙ্কা কেবল সতীর্থদের আসা যাওয়া দেখছিলেন।
তিনিই লড়াই করে লঙ্কানদের দুইশ পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। শেষ ব্যাটার হিসেবে তিনিই আউট হয়েছেন, ৩৯ বলে ২৫ করে। শেষ উইকেটটি নেন ম্যাক্সওয়েল।
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফল বোলার অ্যাডাম জাম্পা। ৪৭ রানে তিনি নিয়েছেন ৪টি উইকেট। ২টি করে উইকেট শিকার মিচেল স্টার্ক আর প্যাট কামিন্সের।