সংসদ নির্বাচন ঘিরে চট্টগ্রামে আ.লীগে ‘ডামি’ প্রার্থীর ছড়াছড়ি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রামের প্রায় সব আসনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটের মাঠে ‘ডামি’ প্রার্থী হিসেবে থাকছেন দলীয় নেতারা। বিনা ভোটের সংসদ সদস্য (এমপি) ঠেকাতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ডামি’ প্রার্থীর বিষয়ে সবুজ সংকেত দেন।
এরপর থেকেই অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেউ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।তবে এসব স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাঁকে আবার অনেকে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবেও ভোটের মাঠে আসছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১০টিতে আওয়ামী লীগ ও জোটসঙ্গীদের একাধিক প্রার্থী থাকার আলোচনা শুরু হয়েছে। স্বতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া প্রার্থীরা নিজেদের জয়ী করতে সব ধরনের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া–লোহাগাড়া আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। এই আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব। যিনি পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। নদভী ও মোতালেবের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব রয়েছে। অন্যদিকে বেশির ভাগ তৃণমূল নেতা চান না এই আসনে নদভী জিতুক। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে জামায়াতের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখার অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম–৮ আসনে (বোয়ালখালী–চান্দগাঁও–পাঁচলাইশ) নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। তাঁর আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু। তিনি বলেন, ‘এলাকার মানুষজন আমাকে ভালোবাসেন। তাঁদের হয়ে কাজ করতে চাই। আমিও নির্বাচন করব।’
চট্টগ্রাম–১২ পটিয়া আসনে আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী করেছে পটিয়া উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে। তিনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। তিনি টানা তিনবার এই আসনের সংসদ সদস্য। এবার মনোনয়ন পাননি। তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে বলেন
এদিকে চট্টগ্রাম–১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। নিজের আসনে ছেলে মাহবুব রহমান পেয়েছেন নৌকার টিকিট। এই আসনে মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করছেন বলে জানান।
চট্টগ্রাম–৪ সীতাকুণ্ড আসনে এবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন এস এম আল মামুন। তাঁর বাবা এ বি এম আবুল কাশেম মাস্টার সীতাকুণ্ড আসন থেকে কয়েকবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলম গত দুই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। এবার মনোনয়নবঞ্চিত দিদারুল আলমও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন।
চট্টগ্রাম–২ (ফটিকছড়ি) আসনে এবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। ১৪ দলীয় জোটের তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য। তিনি ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
চট্টগ্রাম–৫ হাটহাজারী আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম। এখানে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। টানা তিনবার তিনি এই আসনে বিজয়ী হয়েছেন। এই আসনে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের ভিপি নাজিম উদ্দিন।
চট্টগ্রাম–১৬ বাঁশখালী আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্রও নিয়েছি।’