সড়ক থেকে হকার তাড়াতে মেয়রের ভাবনায় হলিডে মার্কেট
চট্টগ্রাম নগরে ফুটপাত সড়ক দখল করে থাকা হকারের উৎপাত ঠেকাতে হলিডে মার্কেট স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার নগরের আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব মার্কেট স্থাপনের ভাবনার কথা জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার (২৯ অক্টোবর) নগরের থিয়েটার ইন্সটিটিউটে ৩৩তম সাধারণ সভায় হকার প্রসঙ্গে তিনি এ প্রস্তাবনার কথা জানান।
পুনর্বাসনে কোন সুফল হয়নি বলেই এ ভাবনা উল্লেখ করে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, অনেকে হকার পুনর্বাসনের কথা বলেন। পূর্বে হকার পুনর্বাসন কোন সুফল বয়ে আনেনি। এর আগে জহুর হকার মার্কেটে হকারদের পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু দোকান বরাদ্দ পেয়েই অনেকে দোকান বিক্রি করে আবারও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা শুরু করেন। একারণে, শুক্র ও শনিবার আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় উপযুক্ত স্থানে হলিডে মার্কেট চালু করার পক্ষে আমি।
এর আগে হকার প্রসঙ্গ উঠতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, হকার সবসময় ছিল। কিন্তু এখন এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে যেন ফুটপাতগুলো টাইলস করে দেয়াই হয়েছে তাদের ব্যবসা করার জন্য। আর রাস্তায় ভ্যানগাড়ির কারণে প্রচণ্ড জ্যাম হচ্ছে। হকারদের জন্য শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে মেয়েরা স্কুলেও ঢুকতে পারেনা।
ব্যাটারি রিকশা/ বহদ্দারহাট টু সল্টগোলায় নতুন পরিকল্পনা।ব্যাটারি রিকশা বন্ধে সভায় উঠে এসেছে নতুন পরিকল্পনার কথা। ব্যাটারি রিকশাকে সোলার রিকশায় রূপান্তর, চালকদের লাইসেন্স, মূল সড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ও প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিষয়ে পরিকল্পনা উঠে এসেছে। আইনি কাঠামোতে ব্যাটারি রিকশা বন্ধের সুযোগ থাকলে প্রাথমিকভাবে বহদ্দারহাট থেকে সল্টগোলা রুটে ব্যাটারি রিকশা বন্ধ করে এ পরিকল্পনা বাস্তবা পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তার এ প্রস্তাবনায় সায় দিয়ে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী এসব রিকশায় ২০ কিলোমিটার গতির সেন্সর ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
ক্রেতাদের মার্কেটের পার্কিং ব্যবহার করতে না দেয়ার অভিযোগ।মার্কেটে আসা ক্রেতাদের পাকিং ব্যবহার করতে না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে চসিকের এবারের সমন্বয় সভায়। খোদ চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এ অভিযোগ তুলে ট্রাফিক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এসব মার্কেট মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি বেশ কিছু বড় মার্কেট কাস্টমারদের পার্কিং ব্যবহার করতে না দেয়ায় গাড়ি রাস্তায় পার্কিং করায় প্রচণ্ড জ্যাম হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগ ও চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলব এসব মার্কেটের কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় আনতে। ইতোমধ্যে ডিসি ট্রাফিক আমার সাথে দেখা করেছেন। আমরা ঠিক করেছি চসিক ও ট্রাফিক বিভাগ একসাথে পে-পার্কিং বাস্তবায়নে কাজ করবে এবং নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাবে।
ডেঙ্গু থেকে রেহাই মিলবে আগামী বছর।ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলমান কার্যক্রম প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, মশা নিধনের পর্যাপ্ত মেডিসিন কেনা হয়েছে, বাড়ানো হচ্ছে জনবল। শুষ্ক মৌসুমে ৬ মাস কাজ করলে আগামী বছর ভাল ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী
নালা-কালভার্টের নিচে সব সংস্থার পাইপ অপসারণের উদ্যোগ।যেসব নালা-কালভার্টের নিচে ওয়াসা-টিএন্ডটিসহ বিভিন্ন সংস্থার পাইপ গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করে ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে সেগুলো অপসারণের ব্যবস্থা নিতে কাউন্সিলরদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া অনুমতি ছাড়া সড়ক কর্তনকারী ঠিকাদার ও গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে।
পতেঙ্গা এলাকায় লবনাক্ততার জন্য পানি খাওয়াতো দূরে থাক, সে পানি দিয়ে গোসলও করা যাচ্ছেনা মন্তব্য করে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে সুপেয় পানি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
তিনি বলেন, পতেঙ্গা এলাকায় লবনাক্ততার জন্য পানি খাওয়াতো দূরে থাক, সে পানি দিয়ে গোসলও করা যাচ্ছেনা। আবার একসময়ের সুপেয় পানির উৎস পুকুর-দীঘীগুলোও নেই। এজন্য ওয়াসাকে জলাবায়ু পরিবর্তন ও নগরীতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে সুপেয় পানি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
জবাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রউফ জানান, সুপেয় জল সরবারেহ সক্ষমতা বাড়াতে ওয়াসা সচেষ্ট আছে। চসিকের সাধারণ সভায় উত্থাপিত বিষয়গুলো দ্রুত সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। ইতোমধ্যে ফিরিঙ্গিবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পাইপ লাইনের লিকেজ মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুরাতন কিছু ওয়াসার পাইপ নালা ও বক্স কালভার্টের ভিতর ছিল সেগুলো সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামের অন্য সেবা সংস্থাগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রীর টানেল উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংস্থার যেসব প্রতিনিধি এসেছেন তারা অনেকে চট্টগ্রামের উন্নয়ন দেখে অবাক হয়ে গেছেন। বিশেষ করে সড়ক নির্মাণ, আলোকায়ন ও সৌন্দর্যবধনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রশংসা কুড়িয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে অন্য সংস্থাগুলোর সহযোগিতার কারণে।
সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধান এবং নগরের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।