সমন্বয়কের ‘ছড়াছড়ি’ চট্টগ্রামজুড়ে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে সরকার পতনের পর সমন্বয়কের ‘পরিচয়দাতা’ বেড়েছে চট্টগ্রামজুড়ে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অনেকে নিজেরা নিজেদের মতো করে সমন্বয়ক টিম গঠন করছেন। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বাজার তদারকি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের সরব উপস্থিতিও জানান দিচ্ছেন সবখানে। হঠাৎ করে ‘বনে’ যাওয়া এসব সমন্বয়কের কাজে অনেকে বাহবা দিলেও ‘বিশৃঙ্খল’ কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের ‘ঐতিহাসিক অর্জন’ প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
গত শনিবার (১০ আগস্ট) নগরের নিউমার্কেট মোড় থেকে মো. তানভীর শরীফ নামে এক ‘ভুয়া’ সমন্বয়ককে ধরে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেন উপস্থিত শিক্ষার্থীরা। তার বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং তথ্য পাচারের অভিযোগ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে, শিগগিরই সব সমন্বয়কদের তালিকা একত্র করে প্রকাশ করার কথা বলছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়করা।
তবে, সবশেষ ৩০ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় রাসেল আহমেদ ও খান তালাত মাহমুদ রাফির নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৫ জন সমন্বয়কের নাম পাওয়া গেছে। যদিও তাদের অনেকে বলছেন, পরবর্তীতে আরো কয়েকজনকে যুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হয়েছেন। সমন্বয়কদের আরো অনেককে সেখানে ‘সহকারী উপদেষ্টা’ হিসেবে নেওয়া হতে পারে— এমন খবরের পর সমন্বয়কের সংখ্যা বেড়ে গেছে!
জানা গেছে, বিভিন্ন উপজেলায় অনেকে নিজেকেই সমন্বয়ক পরিচয়ে কমিটি করে ছোট ছোট দলে বিভিক্ত হয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বাজার তদারকি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিচ্ছেন। এতে কারো কারো বাহবা পেলেও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, ক্ষণে ক্ষণে একাধিকজন এসে সমন্বয়ক পরিচয় দিচ্ছেন। দোকানে দোকানে সব পণ্যের দাম নিয়ে জিজ্ঞেস করছেন। অনেক জায়গায় আবার দাম কমানোর ‘আল্টিমেটাম’ দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে কথা বাড়াতে ভয় লাগে।
তবে এলাকাবাসীর মতে, এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট টিম করে প্রচার করা যেতে পারে। যাতে কেউ অসদুপায় অবলম্বন করতে না পারে।
বোয়ালখালীতে ১৫৮ জন সমন্বয়ক!
১২৬ বর্গকিলোমিটারের বোয়ালখালী উপজেলায় ১৫৮ জন সমন্বয়কের খোঁজ পাওয়া গেছে। অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মারফতে জানা গেছে, উপজেলাভিত্তিক কোনো ধরনের সমন্বয়ক নির্ধারণ করা হয়নি। শুধু ওই উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজ অর্থাৎ স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ হিসেবে মোহাম্মদ শাকিল নামে একজনকে সমন্বয়ক করা হয়েছে।
স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের সমন্বয়ক মোহাম্মদ শাকিল সিভয়েস২৪’ বলেন, ‘বোয়ালখালীতে অফিসিয়ালি এখন পর্যন্ত একজনও সমন্বয়ক নেই। আমি হচ্ছি, স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের সমন্বয়ক। গত ১০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয়ভাবে আমাকে স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের সমন্বয়ক ঘোষণা করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে একটা মহল ফেসবুকে বিভিন্ন রকম ট্রল করে পোস্ট করছে। আমি মূলত জেলার সঙ্গেই কাজ করে যাচ্ছি। কেন্দ্র থেকে যে লিস্ট আগে ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে আমার নাম আছে।’
বোয়ালখালীতে ১৫৮ জন ভুয়া সমন্বয়ক তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু তথ্য পেয়েছি এবং শুনেছি বোয়ালখালীতে ১৫৮ জন সমন্বয়ক হয়েছেন। তবে বিষয়টি কতটুকু সত্য জানি না।’
কাভারেজের জন্য মিডিয়ায় ফোন!
রবিবার (১১ আগস্ট) বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রামের একজন গণমাধ্যকর্মীর মুঠোফোনে ফোন আসে। ফোন ধরতেই, অপরপ্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তারা পরিদর্শনে যাচ্ছেন, সেখানে মিডিয়া কাভারেজের জন্য অনুরোধ করেন। তবে, প্রতিবেদক অন্য একটি অনুষ্ঠানে থাকার কারণে যেতে পারছেন না বলে জানান। এরপরও সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি বারবার ফোন দিতে থাকেন। পরে প্রতিবেদক ওই সমন্বয়ককে বলেন, ‘নিউজ সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠালে প্রকাশ করার চেষ্টা করবেন।’ এরপর অবশ্য হোয়াটসঅ্যাপে পরিদর্শন সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাঠাননি তিনি।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা যা বলছেন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রামের (কেন্দ্রীয়) সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘সমন্বয়ক নিয়ে কিছু কনফিউশন তৈরি হয়েছে। এছাড়া আমরা কিছু সমন্বয়ক যুক্ত করেছি; এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৫ জনের মতো সমন্বয়ক রয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ সমন্বয়কের তালিকাটা আমরা শিগগিরই প্রকাশ করবো।’
চট্টগ্রামের আরেক সমন্বয়ক মোহাম্মদ ইমন সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় সমন্বয়কের ছড়াছড়ির কথা শুনছি। তবে চট্টগ্রামে নতুন করে যুক্তসহ প্রায় ৭৫ জনের মতো সমন্বয়ক রয়েছে। যদিও সেটা তালিকা প্রকাশ করার পর পুরোটা নিশ্চিত করা যাবে। কে বা কারা কারা সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন।’