চট্টগ্রাম

সমন্বয়ক পরিচয়ে চট্টগ্রামে হোটেলে ভাঙচুর-লুটপাট, গ্রেপ্তার ১১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে খুলশী এলাকায় দুইটি আবাসিক হোটেলে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় একজন পালিয়ে গেছে। তাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা নাগাদ প্রথমে খুলশী আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কস্থ প্যাসিফিক গেস্ট হাউজ নামের একটি আবাসিক হোটেলে চড়াও হয় একদল যুবক। তারা নিজেদেরকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ এবং কর্মী পরিচয় দিয়ে হোটেলটিতে ‘রেইড’ দেয়ার নামে তাণ্ডব শুরু করে।

তারা হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংচুর এবং ভিডিআর খুলে নেয়। প্যাসিফিক গেস্ট হাউজের মালিক নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বন্যায় তার সেনবাগস্থ গ্রামের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার স্ত্রী সন্তানদের সকলকে নিজের আবাসিক হোটেলে এনে রাখেন।

বুধবার রাতে তিনি কন্যাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যখন ডাক্তারের চেম্বারে তখন এক যুবক নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে দ্রুত হোটেলে আসতে বলে। তিনি দ্রুত হোটেলে এসে দেখেন যে, যুবকেরা তার ৯ বছর বয়সী সন্তানকে চর থাপ্পড় মারছে। তারা হোটেলে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। যুবকেরা হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংচুর এবং ডিভিআর নিয়ে যায়। যুবকেরা হোটেলের জিনিসপত্রও তছনছ করে। তারা তার স্ত্রীর ৮ ভরি স্বর্ণালংকার এবং নগদ ৮৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তিনি শুনতে পান, নগরীর ফয়েজ লেক এলাকার মোটেল সিক্স সনিকেও একই ধরণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ওই হোটেলের মালিক এবং কর্মচারীদের শোর চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ১১ যুবককে আটক করে।

নজরুল ইসলাম এজাহারে উল্লেখ করেন, ১১ যুবক আটকের খবর পেয়ে তিনি দ্রুত মোটেল সিক্স সনিকে যান এবং উক্ত যুবকেরা তার হোটেলেও একইভাবে হামলার চালানোর ব্যাপারটি শনাক্ত করেন। এই সময় এলাকাবাসী আটককৃত যুবকদের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়।

আটককৃত ১১ যুবক হলো, আইমন দোভাষ, ইরফাত হোসেন, হাসনাত ঊল্লাহ, অরণ্য ঘোষ, ওমর ফারুক, শাহরিয়ার হান্নান, সাকিব খান, ফয়সাল চৌধুরী, আরাফাত হোসেন সিয়াম, সাইদ মোহাম্মদ আদনান, শুভ আহমেদ রনি।

এছাড়া ইরফান নামের আরেকজনকে মামলায় আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ইরফান পলাতক রয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে যে, প্যাসিফিক গেস্ট হাউজ থেকে টাকা এবং স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়ে ইরফান আর দ্বিতীয় অভিযানে অংশ নেয়নি।

রাতে পুলিশ চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সাথে কথা বলেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এই যুবকেরা তাদের কেউ নয় বলে জানিয়েছেন। হামলা, ভাংচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় খুলশী থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কবিরুল ইসলাম জানান, দুইটি আবাদিক হোটেলে ভুয়া পরিচয়ে চাঁদা আদায় করতে যাওয়া ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হলেও একজন পলাতক রয়েছে। তাকেও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘পুলিশ আমাকে ইনফর্ম করেছিল। আমাদের লাউড এন্ড ক্লিয়ার বার্তা ছিল, যারাই হোক আইনের আওতায় আনুন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d