সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে ভিক্ষুকের টাকা আত্মসাৎ
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বামী হারান ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদি ইউনিয়নের বড় শ্রীবদ্দি গ্রামের কুটি খাতুন। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে অভাব অনটনে ভুগে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে আসছেন তিনি।
পেটের তাগিদে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন-যাপন করছেন ৮২ বছর বয়সী কুটি খাতুন। বসবাস করছেন প্রতিবেশীর ঝুপড়ি ঘরে।
শেষ বয়সে একটি সরকারি ঘরে মাথা গোঁজার স্বপ্ন দেখেন। আর সেই স্বপ্নপূরণের জন্য দুই বছর আগে ভিক্ষা করে জমানো ১৫ হাজার টাকা তুলে দেন স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানের হাতে।
তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এখনো মেলেনি সেই সরকারি ঘর। এমনকি ফেরত পাননি টাকা। এখন পর্যন্ত কোনো ভাতার তালিকায় তার নামও ওঠেনি। কুটি খাতুন বড় শ্রীবরদী গ্রামের মৃত ইউসুফ মাতুব্বরের স্ত্রী।
প্রতিবেশীরা জানান, মুক্তিযুদ্ধের বছর মারা যান কুটি খাতুনের স্বামী। তার দুটি ছেলে সন্তান থাকলেও তারা কেউ মাকে দেখেন না। স্বামীর সম্পত্তি বলতে এক টুকরো ভিটা থাকলেও মাথা গোঁজার মতো ঘর ছিল না। প্রতিবেশীর একটি ঝুপড়ি ঘরে থেকে ভিক্ষা করে পেট চালান তিনি। বর্তমানে অনাহারে অর্ধাহারে কাটছে তার জীবন।
সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করে কুটি খাতুন বলেন, সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে দুই বছর আগে চরযোশরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সাহেব ফকির আমার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু টাকা নিলেও ঘর দেয়নি। আমি ঘরের জন্য অনেক ঘুরেছি, লাভ হয়নি। এখন দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে বিচার চাই!
কুটি খাতুনের ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাসির খান বলেন, ওই বৃদ্ধা মহিলা বারবার আমার কাছে এসে ঘর ও টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করলেও তিনি গুরুত্ব দেননি।
অভিযোগ ওঠা চরযোশরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান সাহেব ফকির বলেন, কুটি খাতুনকে আমি চিনিই না। তবে শুনেছি, সরকারি ঘরের জন্য পাচী নামে এক মহিলাকে এক বৃদ্ধা ১৩ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা পাচী ফেরতও দিয়েছেন। এখন আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে।
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাফী বিন কবির বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে টাকা নেওয়ার প্রমাণ মিললে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া অসহায় এই মহিলাকে অতি দ্রুত সরকারি ভাতার আওতায় আনা হবে।