সর্বস্ব হারানোর বদলে সাফল্য
কারও কারও ধারণা সমবায় সমিতি মানেই ‘সর্বস্ব হারানো’ সংগঠন। কিন্তু এ ধারণা ভুল প্রমাণ করে সাফল্য অর্জন করেছে এমন অনেক সমবায় সমিতি রয়েছে আমাদের নাগালেই। এরকমই একটি সংগঠন ‘বাকলিয়া মহিলা সমবায় সমিতি।’ যা চট্টগ্রাম নগরীর ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে অবস্থিত। সমিতির কর্তারা পিছিয়ে থাকা শিশু ও নারীসংশ্লিষ্ট শিক্ষাকার্যক্রম থেকে শুরু করে সঞ্চয় প্রকল্প ও কর্মসংস্থানের হাতেখড়ির মতো অসংখ্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। যা ইতোমধ্যে আলো ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। তাদের ঝুড়িতে যোগ হয়েছে দেশের সেরা সমবায় সমিতির পুরস্কারও। এককথায় বলা যায়, বাকলিয়া এলাকাজুড়ে আলো ছড়াচ্ছে নারীদের নিয়ে কাজ করা সমিতিটি।
জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৭ মে মাত্র ২০ জন মহিলা সদস্য নিয়ে সমবায় দপ্তরের নিবন্ধন লাভ করে বাকলিয়া মহিলা সমবায় সমিতি। বাকলিয়ার জনবহুল বউবাজার এলাকায় অবস্থিত সমিতির পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে প্রথমদিকে কাজ শুরু করে।
তখনকার নারীরা ছিল অশিক্ষিত, ঘরকুনো, অসচেতন এবং উপার্জনক্ষম। প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের বয়স্ক শিক্ষা ও আত্মসচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমিতির কর্মকাণ্ড শুরু হয়। ধীরে ধীরে সদস্যরা বদলেছেন নিজেদের ও হাজারও জীবন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একসময়ের কর্মহীন নারীদেরও হয়েছে কর্মসংস্থান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতন হিসেবে গড়ে তোলা, বয়স্ক শিক্ষা, প্রি-স্কুল পরিচালনা, পোষ্যদের শিক্ষামুখী করা, সদস্যদের আর্থিক উন্নয়নে সদস্য এবং তাদের পোষ্যদের কম্পিউটার, বিউটি পার্লার, টেইলারিং, ব্লক, বাটিক, ড্রাইভিং, ফাস্টফুড প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ট্রেড প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এলাকার নারীদের এবং তাদের পোষ্যদের কর্মমুখী করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। বর্তমানে চামড়াজাত পণ্য তৈরি, ক্রিস্টাল পাথরের ব্যাগ, শোপিস ও জুয়েলারি পণ্য তৈরি, প্রি-স্কুল, স্বাস্থ্য বিষয়ক এবং দুর্যোগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে।
সমিতির ম্যানেজার রীনা বেগম বলেন, সমিতিতে বর্তমানে পাঁচজন স্থায়ীভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন প্রি-স্কুল শিক্ষক, একজন প্রশিক্ষকসহ মোট সাতজনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য চুক্তিভিত্তিক তিনজন প্রশিক্ষক রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে সমিতিতে সহ¯্রাধিক সদস্যের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়, এখনও স্কুলে যায় না, ছোট্ট সেই সোনামণিদের সমিতির খরচে প্রাক-প্রাথমিক লেখাপড়া খেলার মাধ্যমে শেখানো হয়। শিশু শিক্ষা ও সঞ্চয় প্রকল্পে ২০ টাকার মতো ছোট অংকের টাকা সমিতিতে জমিয়ে প্রতিটি শিশু মায়ের মতো সঞ্চয়ী হচ্ছে।
রীনা বেগম আরও বলেন, শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তিনশতাধিক নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছি। ৫০ জন নারী নানাধরনের হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সমিতির নারীদের সঞ্চয় প্রকল্প থেকেই পাওয়া টাকায় বিভিন্ন খাতে পাঁচ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত নানা মেয়াদে ঋণ দেওয়া হয়। ঋণ নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে। স্বামীর ব্যবসা বাড়ানোর পাশাপাশি অনেকেই সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করছেন। যাদের ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। চট্টগ্রাম জেলা সমবায় অফিসার মুরাদ আহাম্মদ পূর্বকোণকে বলেন, সমিতিটি এলাকার অবহেলিত ও নিম্ন শ্রেণির নারীদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন আত্মসচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান ও জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড, কর্মসংস্থান এবং স্ব-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অনগ্রসর নারী ও তাদের পোষ্যদের আর্থিক, সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা রেখে আসছে।