সাড়ে ৪ মাস পর কবর থেকে তোলা হলো গৃহবধূর লাশ
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দাফনের ৪ মাস ১১ দিন পর মেহেরুন্নেছা (২১) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে লাশটি উত্তোলন করা হয়।
এদিকে লাশ উত্তোলনের খবর পেয়ে শত শত এলাকাবাসী কবরস্থানে ও বাড়িতে ভিড় জমায়। এ সময় পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
নিহতের পরিবারের মামলার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে উপজেলার চিকনদণ্ডি ইউনিয়নের বড়দীঘির পূর্বপাড় এলাকার গৃহবধূর বাপের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে হাটহাজারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহারাজ শারবীনের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করেছে মডেল থানার পুলিশ।
পুনঃ ময়নাতদন্তের আবেদন সূত্রে ও নিহতের ভাই মো. নাইম জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপুর এলাকার হাজি কবির আহম্মদ বাড়ির আমার বোনের শশুড়বাড়িতে নিজ রুমে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর দেয় শশুড়বাড়ির লোকজন। এরপর দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার বোন মেহেরুন্নেছার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পাই। ঝুলন্ত লাশের অবস্থা দেখেই আত্মহত্যা করেছে তা মনে হয়নি। তাকে হত্যা করে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের খবর দেয়া হয়েছিল দরজা ভেতর থেকে বন্ধ কিন্তু দরজা খোলা দেখতে পাই ঘরের। এরপর পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে লাশের প্রথম সুরতহালে বিশেষ স্থানে আপত্তিকর পরিলক্ষিত এমন বর্ণনা লিখলেও পরবর্তীতে মেডিকেলের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সে লেখাটি ছিল না। রিপোর্টে বলা হয়েছিল আত্মহত্যা।
পরে ২৯ মে পুনঃ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলনে আমরা আবেদন করলে আদালত তা আমলে নিয়ে রায় দেন। একইসাথে মামলার ১ নম্বর আসামি নিহত মেহেরুন্নেছার দেবর মো. সাইফুল ইসলামের বায়োজিক্যাল পরীক্ষার জন্যও আদেশ দিয়েছেন আদালত।
হাটহাজারী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলী আকবর বলেন, মেহেরুন্নেছার লাশ বাপের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে উত্তোলনের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে মামলার ১ নম্বর আসামি মো. সাইফুল ইসলামের বায়োজিক্যাল পরীক্ষা করানো হবে।
হাটহাজারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহরাজ শারবীন বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেয়ে গৃহবধূ মেহেরুন্নেছার লাশ পারিবারিক কবরস্থান থেকে হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশের সহায়তায় ও স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. নুরুল আফছারের উপস্থিতিতে উত্তোলন করা হয়েছে।
হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুনঃ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তীতে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী পৌরসভাধীন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী কবির আহাম্মদের বাড়ি থেকে গৃহবধূ মেহেরুন্নেছার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ওই বাড়ির প্রবাসী ওয়াহিদুল আলম মঞ্জুর স্ত্রী ও বড়দীঘিরপাড় এলাকার লাল মিয়া মিস্ত্রির বাড়ির আব্দুল কাদেরের মেয়ে। ঘটনার পর পরই নিহতের পরিবার তার দেবর, এক ননদ ও শাশুড়িকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিলেন।