সাতকানিয়ায় অস্ত্র দিয়ে যুবককে ফাঁসানোর ঘটনায় এসআই প্রত্যাহার
সাতকানিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে মাঠে ক্রিকেট খেলার সময় যুবককে খেলার মাঠ থেকে আটকের পর অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় সাতকানিয়া থানার এসআই আব্দুর রহিমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহর নির্দেশে অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অভিযান) আসাদুজ্জামানকে কমিটির প্রধান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) শিবলী নোমান ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তাকে কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে ঘটনার যথাযথ তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, এসআই আব্দুর রহিমকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে সাতকানিয়ার ঢেমশা ইউনিয়নের মাইজপাড়ায় খেলার মাঠ থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত তানভীর হোসেন তুর্কি (২৫)কে আটক করে সাদা পোশাকের পুলিশ। সে একই এলাকার মোবারক হোসেন ড্রাইভারের ছেলে। রাতে তাঁকে ১টি এলজি, চার রাউন্ড কার্তুজসহ গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়। অস্ত্র আইনে তুর্কির বিরুদ্ধে মামলা করেন এসআই আব্দুর রহিম।
সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউল হক চৌধুরী তখন গণমাধ্যমকে জানান, গ্রেপ্তারকৃত তুর্কি এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে থানায় অস্ত্র আইনে ৮টি মামলা রয়েছে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক ছিল।
গত রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তুর্কির বড় ভাই রাহাত হোসেন কফিল অভিযোগ করেন, তানভীর হোসেন তুর্কি যুবলীগের রাজনীতি করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজ করেছিলেন দলীয় প্রতীক নৌকার হয়ে। পুলিশ-সোর্স মিলে পরিকল্পনা করে তাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের নাটক সাজিয়েছে। আর সেই ‘নীল নকশার’ একটি কল রেকর্ডও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তুর্কির বড় ভাই রাহাত হোসেন কফিল বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টার সময় আমাদের স্থানীয় মাঠে ক্রিকেট খেলছিল তুর্কি। এ সময় ৮ থেকে ১০ জন সাদা পোশাকধারী পুলিশ তাকে আটক করে। ওই সময় এলাকাবাসী গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ মারমুখী আচরণ ও ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তুর্কিকে সাতকানিয়া নিয়ে যায়। সন্ধ্যার কিছু পরে আমার আরেক ছোট ভাই হিরো তুর্কিকে দেখতে গেলে ধরে নিয়ে তাকেও থানায় কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এরপর ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।
রাত ৮টার দিকে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পারি তুর্কির কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়েক ঘণ্টা পর সাতকানিয়া থানা পুলিশ তুর্কিকে অস্ত্র দিয়ে ছবি প্রকাশ করে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ করে। সাতকানিয়া থানা পুলিশের এমন আচরণে এলাকাবাসীসহ ঘটনার চাক্ষুষ সকলে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। আমার ভাই কোন অন্যায় কাজ করার কারণে আইনের চোখে অপরাধী হলে দেশের প্রচলিত আইনে উপযুক্ত বিচারে আমাদের কারো বাধা নেই। কিন্তু খেলার মাঠ থেকে প্রকাশ্যে দিবালোকে ধরে নিয়ে নিরস্ত্র কাউকে অস্ত্রধারী বানানো কত বড় অপরাধ হতে পারে?
তদন্তের মাধ্যমে আমার ভাইকে অস্ত্রধারী বানানোর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমুলক ব্যবস্থা ও সাজানো অস্ত্র উদ্ধার মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।