সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করায় ২ সাংবাদিকদের ওপর হামলা
রাজধানীর বঙ্গবাজারে সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সভাপতি আল সাদী ভুইয়া ও জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক নাহিদ সাব্বির।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বঙ্গবাজারের বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে। এক শিক্ষার্থী ও একজন ব্যবসায়ীও হামলার শিকার হন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, শাহবাগ থানার ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলির স্বামী আবুল হোসেন টাবু ও বিএনপির পদ প্রত্যাশী নেতা রফিকুল ইসলাম স্বপন, শাহবাগ থানার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ ইউসুফ এ হামলায় জড়িত।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বাংলানিউজকে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূইয়াকে কক্ষের মেঝেতে ফেলে মাথায়, পিঠে, কোমরে, পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। আঘাতের কারণে তার সারা শরীরে ক্ষত তৈরি হয়েছে। তার পিঠের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে।
অন্যদিকে নাহিদকে দোতলায় মারধরের পর ছাদে তুলে পেটানো হয়। তিনি বাঁ পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। এক শিক্ষার্থীর ডান হাতের একটি আঙুলের অগ্রভাগ কেটে ফেলা হয়েছে।
মারধরের একপর্যায়ে আল সাদীর মোবাইল ছিনতাই করে আক্রমণকারীরা। নাহিদের মোবাইল, মানিব্যাগ, বাইকের চাবি, প্রেস আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে আল সাদী ভুঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি ও আমার কলিগ নাহিদ বঙ্গবাজারে বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে কাপড় দেখতে গিয়েছিলাম। তখন মার্কেটের মালিকপক্ষের কেউ আমাদের চিনতে পেরে বলে, সজল ভাই ওপরে আছেন। তখন আমরা ওপরে গিয়ে দেখি, একটা পক্ষ দরজা ভাঙচুর করছে। তাদের নেতৃত্বে রয়েছে কাউন্সিলর চামেলির ভাই স্বপন ও স্বামী টেবু। আমরা যখন সজল ভাইয়ের অফিসে যাই, তখন টেবুর ও স্বপনের নেতৃত্বে আমাদের সবার ওপর হামলা করা হয়। আমরা সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করায় আমাদের ওপর তারা হামলা করে। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরে আমাদের ওপর বেশি হামলা করা হয়। বের হয়ে আমরা পুলিশ নিয়ে আসি। পুলিশের সামনেও তারা আমাদের মারার চেষ্টা করে, কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনো সাহায্য করেনি।
এ বিষয়ে মার্কেটের ব্যবসায়ী বাধন বলেন, এই মার্কেটে আমার দোকান আছে। আমি মালিকের (সজলের) সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন মালিকের আরেক পক্ষ যারা আওয়ামী লীগ করতো তারা দরজা ভেঙে আমাদের ওপর হামলা করে। প্রাণ বাঁচাতে আমরা কয়েকজন বাথরুমে অবস্থান নিলে তারা দরজা ভেঙে আমাদের ওপর হামলা করে। টাবু আওয়ামী লীগ করে। তার সেল্টারে তার আপন ভাই ইউসুফ এতদিন ব্যবসা করে আসছে। সে বিএনপিতে নাম লিখিয়ে রাখছে যেন ক্ষমতায় একটা পজিশন তৈরি করতে পারে। তারা একজন আওয়ামী লীগ করে আরেকজন বিএনপি করে। তারা একে অপরকে রক্ষা করে।
ঘটনার একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। তারা সেখানে সাংবাদিকদের রক্ষা করতে পুলিশকে আহ্বান জানান।
সারজিস আলম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আজকে সাংবাদিকসহ অন্যদের ওপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ ছাত্র-জনতা তাদেরকে শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রোকসানা ইসলাম চামেলীকে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠ ছিলেন চামেলী। অনেক আগ থেকেই তিনি বঙ্গ ইসলামিয়া সুপার মার্কেট-১ দখল করার চেষ্টা করছিলেন। এ কারণে তাকে আওয়ামীলীগ থেকে বরখাস্তও করা হয়।