সিপিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে গণসমাবেশ
ক্ষমতাসীন সরকার একাদশ সংসদ নির্বাচনে রাতের আঁধারে ভোট নিয়েছিল উল্লেখ করে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি কমরেড মো. শাহ আলম বলেছেন, ‘এবারও আওয়ামী লীগ ডামি-আমি নির্বাচন দিয়ে নিজেরাই ক্ষমতায় বসেছে। আর এর কুফল ভোগ করবে সাধারণ মানুষ।’
শনিবার (৯ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের পুরাতন রেলস্টেশন চত্ত্বরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা সংসদের গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। দলের ৭৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
টাকা পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশের দাবি করে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম বলেন, ‘প্রতিবছর দেশ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। সরকারের কাছে সব তথ্য আছে। সরকারকে বলব, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনেন। পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশ করুন, ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করুন।’
দেশের মানুষ শান্তিতে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চাকরির সংকট, শ্রমিক ছাঁটাইসহ লুটপাটের এক উৎসবে মেতেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আর আমাদের সোনার ছেলেদেরকে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করে বেকার ঘুরতে হচ্ছে। তথাকথিত সরকার আর তথাকথিত সংসদ সদস্যরা দেশের টাকা পাচার করছেন। আর এসবের শিকার সাধারণ মানুষ।’
কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি অশোক শাহার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা পরেশ কর, কেন্দ্রীয় সদস্য শ্রমিক নেতা মৃণাল চৌধুরী ও লাকী আক্তার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি অধ্যাপক কানাই লাল দাশ, অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর, মো. শওকত আলী, উত্তম চৌধুরী, শ্রমিক নেতা মছিউদ্দৌলা, কৃষক নেতা ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জেলা সংসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছফা ভূইয়া।
দেশের মানুষ উত্তরাধিকারের রাজনীতির কাছে বন্দি হয়ে গেছে মন্তব্য করে শাহ আলম বলেন, ‘একদিকে সজীব ওয়াজেদ জয়, আরেকদিকে তারেক রহমান। এ উত্তরাধিকারের রাজনীতি ভেঙ্গে দিতে হবে। বংশের রাজনীতি ভেঙ্গে দিতে হবে। রাজনীতিকে উত্তরাধিকারের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।’
সমাবেশে সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য পরেশ কর বলেন, ‘১৯৪৯ সালে যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সে আওয়ামী লীগ এখন আর নেই। এখন যে আওয়ামী লীগ সেটা জনগণের নয়, সেটা সালমান এফ রহমানের আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ এখন এক মহাবিপদে আছে। কমিউনিস্ট পার্টি সে মহাবিপদ অতিক্রমের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করছে। একদিন সংগ্রাম করে আমরা স্বৈরশাসন হটিয়েছিলাম। এখন আবার ক্ষমতার গদিতে স্বৈরশাসন চেপে বসেছে। দলগতভাবে আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়েও খারাপ অবস্থানে আছে। আওয়ামী লীগের কাছে জনগণের কোনো দাম নেই। এখন জনগণের শেষ ভরসা কমিউনিস্ট পার্টি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফেরাতে হলে, জনগণের অধিকার কায়েম করতে হলে কমিউনিস্ট পার্টিকে শক্তিশালী করা ছাড়া উপায় নেই।’
সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের স্লোগানকন্যা খ্যাত লাকী আক্তার বলেন, ‘যে সময়টি বর্তমানে দেশের মানুষ পার করছে সেই সময়টি সুখকর নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় সংকট। সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে সর্বত্র নিষ্পেষিত। দেশের আজকের এই পরিস্থিতি সাধারণ মানুষ নিয়ে আসেনি, নিয়ে এসেছে ক্ষমতাসীন সরকার। আজকে চট্টগ্রামের আনাচে কানাছে পাহাড় থেকে শুরু করে সবজায়গায় চলছে ভূমি দখল। এগুলো করছে ক্ষমতাসীনরা, প্রভাবশালীরা, তাদের ছত্রছায়ায় পালিত ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের সংসদ সদস্য যারা আছেন, তাদের বেশিরভাগই ব্যবসায়ী।’
সিপিবি, চট্টগ্রাম জেলার সংস্কৃতি শাখার শিল্পীদের গণসঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ শেষে লাল-পতাকার মিছিল পুরাতন রেলস্টেশন থেকে নিউমার্কেট, কোতোয়ালী মোড়, লালদিঘীর পাড় হয়ে সিনেমা প্যালেস চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়।