সুগন্ধি ব্যবহারে ইসলামের বিধান
প্রশ্ন: ইসলামে সুগন্ধির প্রতি কী ধরনের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আর অ্যালকোহলযুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করার বিধান কী
উত্তর: সুগন্ধি ও আতর রাসুল (সা.)-এর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। সুগন্ধি প্রেম থাকা নবী-রাসুলদের আদর্শ।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.)-এর সুরভির চেয়ে হৃদয়কাড়া কোনো ঘ্রাণ আমি কখনো ব্যবহার করিনি। (ইমাম নবভির ব্যাখ্যাকৃত মুসলিম, হাদিস নং ৮৬১৫)
আনাস (রা.)-এর অন্য বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমার পৃথিবীর সুগন্ধি আমার কাছে প্রিয় করা হয়েছে এবং নামাজের ভেতর আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে। ’ (নাসাঈ, হাদিস নং ৩৯৩৯)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.)-কে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি গ্রহণ করতেন। ফিরিয়ে দিতেন না। কেউ সুগন্ধি দিলে ফিরিয়ে দিতেও তিনি নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস নং ৫৫৮৫)
তবে বর্তমানে সুগন্ধিযুক্ত বস্তু যেমন—সেন্ট, বডি স্প্রে ইত্যাদি অ্যালকোহল ছাড়া প্রস্তুত করা দুষ্কর। আর এ বিষয়ে ইসলামের বিধান হলো, যেসব অ্যালকোহল আঙুর, খেজুর অথবা কিশমিশ থেকে তৈরি, সেসব অ্যালকোহল সম্পূর্ণ হারাম। এ ধরনের অ্যালকোহল মেশানো সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। কেননা মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম। ’ (বুখারি, হাদিস নং ৪৩৪৩)
এই তিন বস্তু ছাড়া অন্য উপাদান থেকে যেসব অ্যালকোহল তৈরি করা হয়, যেমন—এখনকার সেন্ট বা বডি স্প্রেগুলোতে সাধারণত আঙুর, খেজুর বা কিশমিশ থেকে প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল থাকে না; বরং বিভিন্ন শস্যদানা, গাছপালার ছাল, মধু, শস্য, যব, আনারসের রস, গন্ধক ও সালফেট, অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান ইত্যাদি থেকে প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল মেশানো হয়। (এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৪৪, প্রকাশকাল ১৯৫০ খ্রি.) তাই এগুলো নাপাক নয়। আর এগুলো নেশার উদ্রেক না হওয়া পরিমাণ ব্যবহার করা যায়। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১৩৪৮, ৩৩৩৭; ফিকহুল বুয়ু ১২৯৮)
সুতরাং যেহেতু সেন্ট বা বডি স্প্রেগুলোতে সামান্য পরিমাণ পরিশোধিত অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় এবং তা শরীরের অভ্যন্তরে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না, তাই এগুলো ব্যবহারে আপত্তি নেই। তবে এরূপ সেন্ট পরিত্যাগ করাই উত্তম। (জাদিদ ফিকহি মাসাইল ১৩৮)