ধর্ম

সূরা আল ইমরানে ক্ষমতা প্রদান নিয়ে যা বলেছেন আল্লাহ

বৃহত্তর গোষ্ঠী, জাতি ও দেশকে পরিচালনার জন্য দলপ্রধান বা রাষ্ট্র প্রধানের প্রয়োজন হয়। যেন একটি সমাজে সুশৃঙ্খলভাবে বসবাস করা যায়। পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে মানুষ বিভিন্ন নিয়মে দলপ্রধান বা প্রধানের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রধান হওয়া বা ক্ষমতার মূলে যাওয়ার জন্য মানুষ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। অনেক সময় মারামারি-হানাহানির মতো ঘটনাও ঘটে থাকে।

তবে পবিত্র কোরআনের সূরা আল ইমরানের ২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান করেন আবার যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন। বর্ণিত হয়েছে,

قُلِ اللّٰهُمَّ مٰلِکَ الۡمُلۡکِ تُؤۡتِی الۡمُلۡکَ مَنۡ تَشَآءُ وَ تَنۡزِعُ الۡمُلۡکَ مِمَّنۡ تَشَآءُ ۫ وَ تُعِزُّ مَنۡ تَشَآءُ وَ تُذِلُّ مَنۡ تَشَآءُ ؕ بِیَدِکَ الۡخَیۡرُ ؕ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ

‘বোলো, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করো এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও; যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মানিত করো আর যাকে ইচ্ছা তুমি হীন করো। কল্যাণ তোমার হাতেই। নিশ্চয়ই তুমি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সূরা আলে ইমরান, (৩), আয়াত, ২৬)

এই আয়াত নাজিলের শানে নুজুল সম্পর্কে তাফসিরে মাআরিফূল কোরআনে বলা হয়েছে, মুসলমানদের অব্যাহত উন্নতি ও ইসলামের ক্রমবর্ধমান প্রসার দেখে বদর যুদ্ধে পরাজিত ও ওহুদ যুদ্ধে বিপর্যস্ত মুশরিক ও অন্যান্য অমুসলিম সম্প্রদায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিল।

মুসলামানদের বিরুদ্ধে মুশরিক, ইহুদি ও খৃস্টানদের একটি সম্মিলিত শক্তি জোট গড়ে তুললো। তারা সবাই মিলে মদিনায় আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিল। একইসঙ্গে বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে পৃথিবীর বুক থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার সংকল্প নিয়ে মদিনার চারদিক অবরোধ করে বসলো। কোরআনে এ যুদ্ধকে গযওয়ায়ে আহযাব অর্থাৎ সম্মিলিত বাহিনীর যুদ্ধ এবং ইতিহাসে গযওয়ায়ে খন্দক নামে উল্লেক করা হয়েছে।ইসলামের শত্রুদের যুদ্ধের সিদ্ধান্তের কথা জেনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে স্থির করেছিলেন যে, শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করতে মদিনার বাইরে পরিখা খনন করা হবে। যাতে তারা পরিখা ডিঙিয়ে মদিনায় প্রবেশ করে হামলা চালাতে না পারে।

বায়হাকী, আবু নাঈম ও ইবনে খুযায়মার রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে, প্রতি চল্লিশ হাত পরিখা খননের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দশজন করে সাহাবির ওপর। পরিকল্পনা ছিল- কয়েক মাইল লম্বা যথেষ্ট গভীর ও প্রশস্ত পরিখা খনন করতে হবে, যা শত্রু সৈন্যরা সহজেই পার হতে না পারে। পরিখা খননের কাজ কাজ খুব দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন ছিল।

সাহাবিরা নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতে লাগলেন। পানাহার, ইস্তিঞ্জার মতো প্রয়োজনগুলোতেও কাজ বন্ধ রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে কাজ করেছিলেন তারা।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এই কাজে একজন সাধারণ সৈনিকের মতো অংশ নিয়েছিলেন।

সাহাবিরা খনন কাজ করার এক পর্যায়ে পরিখার এক অংশে বিরাট একটি প্রস্তর খণ্ড বের হলো। এই অংশে নিয়োজিত সাহাবিরা সর্বশক্তি দিয়েও পাথরের অংশটি ভাঙতে পারছিলেন না। তখন সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লোহার কোদাল দিয়ে প্রস্তরখণ্ডে আঘাত করতেই তা ভেঙে গেল এবং একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ উত্থিত হলো। এ স্ফুলিঙ্গের আলোকচ্ছটা বেশ দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়লো। তা দেখে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ আলোকচ্ছটায় আমাকে হীরা ও পারস্য সাম্রাজ্যের রাজপ্রসাদ দেকানো হয়েছে।

এরপর দ্বিতীয়বার আঘাত করতেই আরেকটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিত হলো। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ আলোকচ্ছটায় আমাকে রোম সাম্রাজ্যের লাল বর্ণের রাজপ্রাসাদ ও দালান-কোঠা দেখানো হয়েছে।

এরপর তৃতীয়বার আঘাত করতেই আবারো আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে পড়লো। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এতে আমাকে সানআ-ইয়ামানের সুউচ্চ রাজপ্রাসাদ দেখানো হয়েছে। তিনি আরও বললেন, আমি তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমাকে বলেছেন, আমার উম্মত অদূর ভবিষ্যতে এসব দেশ জয় করবে।

মহানবীর মুখে একথা শুনার পর মদিনার মুনাফিকরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ শুরু করলো। তারা বলতে লাগলো, দেশ-প্রাণ বাঁচানোই যাদের পক্ষে দায়, যারা শত্রুর ভয়ে পানাহার, ঘুম ত্যাগ করে দিনরাত পরিখা খনন করছে তারাই কিনা পারস্য, রোম, ইয়ামান জয় করার দিবাস্বপ্ন দেখছে। তাদের এই বিদ্রুপের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত নাজিল করেন।

(তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ২/ ৩৮)

মরুভূমি সবুজে ছেয়ে যাওয়া নিয়ে হাদিসে যা বলা হয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d