সেই মোস্তাকিমের মা আর নেই
মোস্তাকিমের মা নাসরিন আকতার কিডনি রোগী ছিলেন। ডাইলাসিস খরচ কমানোর আন্দোলনে জড়িয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মো. মোস্তাকিম। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে ডায়ালাইসিস ফি কমানোর আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার হয়ে আলোচিত হওয়া মো. মোস্তাকিমের মা নাসরিন আক্তার মারা গেছেন। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) ভোরে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মো. মোস্তাকিম বলেন, আম্মুকে ফটিকছড়ি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে আব্বুর কবরের পাশে দাফন করা হবে।
নাসরিন আক্তার কিডনি রোগী ছিলেন। তিনি নিয়মিত চমেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতেন। গত বছরের শুরুতে চমেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধি করা হয়। এর প্রতিবাদে হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনরা আন্দোলনে নামেন। টানা কয়েকদিন ধরে চলা এই আন্দোলনে গত বছরের ১০ জানুয়ারি বিক্ষোভকারীরা চমেকের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এ দিন পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি নিজের মুঠোফোন বের করে বিক্ষোভকারীদের ভিডিও ধারণ করেন এবং তাদের পরে দেখে নেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। এরপর একযোগে সবাই ওসির বিরুদ্ধে হইচই শুরু করেন এবং ভিডিও ডিলিট করার দাবি জানান।
মোস্তাকিমও ওসির সেই মোবাইল সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে হাতাহাতিতে ওসির মোবাইল মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। এরপর ওসি মোস্তাকিমকে পেটাতে পেটাতে চমেকের প্রধান ফটকের বিপরীতে এপিক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও তাকে আরেক দফা মারধর করা হয়। কিছুক্ষণ পর এপিকের সামনে থেকে আরও একজনকে ওসি ধরে ভেতরে নিয়ে যান। পাশাপাশি অন্য পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোকারীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
একপর্যায়ে একজনকে ছেড়ে দিলেও মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তবে মোস্তাকিম আন্দোলনে থাকলেও তার মা তখন চমেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাচ্ছিলেন। হাসপাতালে থাকতে তিনি শোনেন তার ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। কান্না করতে করতে তিনি হাসপাতাল থেকে সরাসরি পাঁচলাইশ থানায় চলে যান। সেখানে গিয়েও তিনি পুলিশ কর্মকর্তার মন গলাতে পারেননি।
এরপর ওই দিন রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বাদি হয়ে একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় মোস্তাকিমকে। এছাড়া মামলাটিতে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়।
পরে জামিন পেয়ে মোস্তাকিম বাদি হয়ে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল সিআইডি।