চট্টগ্রামনগরজুড়ে

হকারদের দখলে বহদ্দারহাট মোড়

নগরীর ব্যস্ততম এলাকা বহদ্দারহাট। কিন্তু এমন একটি এলাকায় সড়কের দু’ধারে ফুটপাতের অধিকাংশ জায়গা এখন হকারদের দখলে। বহদ্দারহাট মোড় থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক ও আরকান সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার জায়গায় দু’ধারে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে প্রায় দুই শতাধিক হকার। এতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে সাধারণ মানুষ চলাচলে। সড়কটির দু’ধারে রীতিমতো মার্কেট বানিয়ে ফেলেছে তারা। ফলে একদিকে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, অপরদিকে বাড়ছে যানজটও।

ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে পসরা সাজিয়ে বিক্রি হচ্ছে জুতা, কাপড়, সবজি, মাছ, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীসহ বিভিন্ন রকম খাবার। অনেক স্থানে ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তার ওপরে ভ্যানগাড়ি সাজিয়ে ব্যবসা করছে। এতে সাধারণ পথচারী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও বয়োবৃদ্ধরা ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে সড়কে নেমে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দিনের পর দিন এ সমস্যা চলতে থাকলেও সমাধানের দায়িত্ব যেন কারোরই নেই। এখানে ব্যবসা করা কয়েক জন হকারের সাথে কথা বলে জানা যায়, এমনি এমনি ব্যবসা করছেন না তারা। প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি চাঁদার বিনিময়ে ব্যবসা করছেন তারা। চাঁদা দেন তিন থেকে চার পক্ষকে। এরমধ্যে বহদ্দারহাট পুলিশ বক্স, চান্দগাঁও থানা পুলিশসহ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এ চাঁদা আদায় করে কতিপয় লোক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হকার বলেন, টাকা দিয়ে ব্যবসা করি। তবুও শান্তিতে বসতে পারি না। এদিকে টাকা তুলে নিয়ে যায়।

অন্য দিকে আবার পণ্য মাপার মেশিন, ভ্যানগাড়ি, দা, ছুরি নিয়ে যায় আরেকজন। কখনো কখনো সবকিছু ফেলে দেয়। এ কাজ বেশি করে পুলিশরা। আবার ৫০০ থেকে হাজার টাকার বিনিময়ে জিম্মি করা পণ্য ফেরত দেয়। মনির হোসেন (ছদ্মনাম) এক হকার বলেন, বহদ্দারহাট মোড় থেকে বহদ্দারবাড়ি পুকুর পাড় পর্যন্ত ২০ টাকা, ৪০ টাকা করে তিন গ্রুপকে চাঁদা দিতে হয়। কখনো কখনো এর বেশিও দিতে হয়। কেউ পুলিশ বক্সের কথা বলে নেয়, কেউ ক্ষমতাসীন দলের লোক বলে ২০ টাকা করে টাকা নেন। আবার মোড় থেকে বহদ্দারহাট আরাকান সড়কের পাশে এবং মোড় থেকে চকবাজারের দিকে যাওয়ার পথে ৫০ টাকা করে পুলিশকে দিতে হয়। এখানে এক এক গ্রুপের লোক এক এক সংখ্যায় টাকা নেয়। কেউ ৫০ টাকা কেউ ৮০ টাকা চাঁদা নিয়ে থাকেন।

সরেজমিন শুক্রবার এবং শনিবার সন্ধ্যায় সড়কটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, পুকুর পাড় থেকে মোড় পর্যন্ত রাস্তার একধারে কাপড়চোপড়, সবজি, মাছ ও বিভিন্ন নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছে হকার।

তাঁরা এমনভাবে ফুটপাত ও রাস্তার কিছু অংশ দখল করেছে যা সাধারণ মানুষ চলাচলে বাধা তৈরি হচ্ছে। মোড়ে এসে সড়কের দু’ধারের ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে কাপড়ের ও ফলের দোকান। স্বজন সুপার মার্কেটের সামনে সড়কে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বিরিয়ানি বিক্রি করছে। একটি পিকাপ গাড়িতে নিত্যপণ্য বিক্রি করছে। কয়েকটি ফলের দোকান বসেছে। সড়কটির বিপরীত পাশে ছেলেদের পোশাক, ডিম সেদ্ধ, চায়ের টং বসিয়ে খাবার বিক্রি করছে। এসব দোকান সবগুলোই জমজমাট। তার উপর দু’পাশেই রয়েছে গাড়ির স্ট্যান্ড। যার জন্য চলাফেরা দায় হয়ে গেছে পথচারীদের।

বহদ্দারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লুৎফুর রহমান সোহেল বলেন, সড়ক দখলমুক্ত করতে প্রায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু একটু পরেই তারা আবার বসে যায়। পুলিশ যে চাঁদা নেয় এটি ঠিক নয়। মাঝেমধ্যে শাস্তিস্বরূপ গাড়ি বা পরিমাপ যন্ত্র নিয়ে আসা হয়। কিন্তু টাকার বিনিময়ে আবার ফেরত দেয়া হয় এটি মিথ্যে কথা। তারা মাপ চেয়ে ভবিষ্যতে এভাবে আর বসবে না সে শর্তে আবার ফেরত দেয়া হয়। তবে ব্যক্তিগতভাবে কোনো পুলিশ চাঁদা নেয় কিনা আমি বলতে পারবো না। পথচারী নেজাম সিদ্দিক বলেন, অনেকে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যায়। ব্যস্ততম এ সড়কে চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে দেখি অনেককে। কারণ ফুটপাতজুড়ে হকাররা ব্যবসা করছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা দরকার।

পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম আশরাফুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় রাজনীতি করছি। আমি এমন অসাধু উপায়ে টাকা ইনকাম করিনি। সবচেয়ে বড় কথা বহদ্দারহাট এলাকায় আমার বাড়ি। আমিও নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করি। এসব ফুটপাতের কারণে আমাকেও যাতায়াতে সমস্যায় পড়তে হয়। আমিও চাই ফুটপাত দখলমুক্ত হোক। এরজন্য পুলিশকে এগিয়ে আসতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d