হাটহাজারীতে হালদার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি; লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি
হাটহাজারীতে হালদা নদীর পাড় ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের প্রায় ৩০-৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার নাজিরহাট নতুন ব্রিজের পশ্চিম পাশে ফরহাদাবাদ ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছালে আহম্মদ দফাদারের বাড়ি সংলগ্ন হালদা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ইউনিয়নটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
টানা বর্ষণের ফলে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ বন্যায় ১ নম্বর ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের লোকজন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একাধিক পরিবারের বসতঘর ও ঘরের যাবতীয় মালামাল বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের বসতঘরে পানি ঢুকে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়েছে।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ভোরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা নৌকা, সাম্পান ও স্পিডবোট নিয়ে বন্যায় আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করছিলেন। বেলা ১১টার দিকে ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল আজিজ বলির বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ জনের মতো পানি বন্দী দুর্গতদের উদ্ধার করা হয়। দুর্গতদের মধ্যে শুকনা খাবার, সুপেয় পানি ও খিচুড়ি বিতরণ করা হয়। ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের শিশু পরিবারের নিরাপদ হেফাজতকারীদের কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকার বন্যা দুর্গতদের নাজিরহাট কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিরহাট কলেজ ও স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
বহুতল ভবনগুলোতেও বন্যা দুর্গত অসংখ্য পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গত পরিবারগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্রে খিচুড়িসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকালীন সময়ে তাদের খাবার ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্যার কারণে ইউনিয়নের ৫০-৬০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেকের বসতঘরে কোমর সমান পানি থাকায় বিভিন্ন পরিবারের গবাদি পশুগুলো মহাসড়কের উপর নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে হালদা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ঘরে পানি ঢুকে গেলে, ঘরের আইপিএস খুলতে গিয়ে ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ইউছুপ চৌধুরী বাড়ির মো. জসিম উদ্দিনের পুত্র মো. জিয়াউর রহমান সাকিব (২২) বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলম শওকত জানান, বৃহস্পতিবার হালদা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখে উল্লেখিত স্থানের বাঁধের উপর বালির বস্তা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করা হলেও রাতে বাঁধ ভেঙে ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় তিন হাজারের বেশি পরিবারের বসতঘরে পানি ঢুকে যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বি এম মশিউজ্জামান শুক্রবার সন্ধ্যায় একুশে পত্রিকাকে জানান, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত সাড়ে চার হাজারের অধিক লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়েছে। তিনি দুর্গতদের সেবায় এগিয়ে আসা সকল স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানান এবং বন্যার কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।