হাটের ঝামেলা এড়াতে এখন খামারে ভিড়
দিন তিনেক পরেই কোরবানির ঈদ। সন্ধ্যার পর ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরগরম সবকটি পশুর হাট, এরইমধ্যে জমে উঠেছে বেচাকেনা। দর্শনার্থী ও ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই নেই হাটগুলোতে। একের পর এক প্রবেশ করছে গরু, ছাগল, মহিষসহ নানা পশুবাহী ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান। তবে হাটের ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন খামার ও কর্পোরেট খামারের বিক্রয়কেন্দ্রে ভিড় করছেন কেউ কেউ। সেখানেই সারছেন ঈদের পশু কেনা।
গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এক নিকটাত্মীয়সহ ছোট ভাই শফিকুল আলম রানারকে নিয়ে নগরীর নাছিরাবাদ এলাকার এলএমটি এগ্রোর বিক্রয়কেন্দ্রে গরু কিনতে এসেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আরিফ আহমেদ চৌধুরী। ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে এই এগ্রো থেকে একটি গরু কিনেছেন তিনি। পশুর হাট বাদ দিয়ে খামারে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আরামসে গাড়ি নিয়ে আসতে পেরেছি, বসতে পারছি। খোলামেলা স্পেস আছে। ওরা আবার কোরবানির দিন পর্যন্ত বিনা খরচে গরুটা এখানে রাখবে। একদিন আগে বাসায় পৌঁছেও দেবে।
এদিন একই এলাকার চৌধুরী র্যাঞ্চে গরু কিনতে আসা ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আসিফ আশরাফি বলেন, হাটে প্রচুর ভিড় থাকে, তাই একটু নোংরা হয়ে যায় পরিবেশ। কিন্তু খামারগুলোতে প্রতি মুহূর্তে পরিষ্কার করা হয়, তাই এখানে পরিচ্ছন্ন থাকে। আবার হাটে ঠকার সুযোগ থাকে। কিন্তু খামার যেহেতু স্থায়ী, তাই তারা অসুস্থ বা সমস্যা আছে এমন পশু বিক্রি করে না। অনেকসময় দেখা যায় হাটে তুলনামূলক বেশি ওজন বলে পশু বিক্রি করে, সেখানে মেপে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু এখানে মেপে দেখার সুযোগ আছে। সবমিলিয়ে এখানে ঝামেলামুক্ত। তাই প্রতিবছর আমি খামার থেকে কোরবানির পশু কেনা পছন্দ করি। এবারও দুটো গরু কিনেছি, একটার দাম ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, আর অন্যটির দাম ৮০ হাজার।
কর্পোরেট খামার বা খামারের বিক্রয়কেন্দ্রে পশু কেনাবেচা নিয়ে নাছিরাবাদ এলাকার চৌধুরী র্যাঞ্চ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী রশীদ মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, খামার আর বাজারের কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। খামারের গরু নির্দিষ্ট, এগুলোর লালন-পালন পদ্ধতিও ভিন্ন। মানুষ কোরবানির জন্য সবচেয়ে সুন্দর ও সুস্থ পশু চান। আবার খামারে হাটের তুলনায় দাম কম থাকে, ঠকার সম্ভাবনা থাকে না। হাসিলের ঝামেলাও নেই। তাছাড়া হাটের আমেজ খামারেও আছে, কিন্তু অতিরিক্ত ভিড়ের ঝামেলা নেই। এবার কোরবানির জন্য ১৩০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০৫টি গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা পরবর্তী সময়ে এগ্রো ফার্ম ও ডেইরি খামারে ঝুঁকছেন শিক্ষিত তরুণরা। খামারে ঝুঁকছে বিভিন্ন শিল্পগ্রুপও। বন্দরনগরীর অন্তত ২০টি শিল্পগোষ্ঠী শুরু করেছে পশুর খামার। তবে এসব খামারের অধিকাংশই শহরের বাইরে হলেও কোরবানির ঈদ ঘিরে শহরে পশু বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র তৈরি করে তারা।