হালুয়া-রুটির ঐতিহ্যে ভাটা, গোশত-পরটায় জোয়ার!
পবিত্র শবে বরাতে বাঙালি মুসলমানদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি হলো, ঘরে ঘরে হালুয়া-রুটি তৈরি এবং প্রতিবেশীসহ গরিব-দুখিদের মাঝে বিতরণ। পূর্বসূরীদের কাছ থেকে পাওয়া সামাজিক এই সংস্কৃতির প্রচলন সুদীর্ঘকাল থেকে। তবে সাম্প্রতিককালে শবে বরাত ঘিরে বাড়ছে গোশত-পরটার বিশেষ আয়োজন। এদিন শহরের মোড়ে মোড়ে, গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় জবাই হয় গরু।
কেন কীভাবে এই প্রথার প্রচলন শুরু হয়েছে জানা না গেলেও শবে বরাতের দিনকে পবিত্র রমজান মাসের আগমনী বার্তা মনে করেন ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমানরা।
জানা গেছে, শবে বরাতের দিনে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে রুটি-হালুয়া তৈরির ধুম পড়ে। থাকে মাংস রান্নার আয়োজনও। বিকেল গড়াতেই রুটি-হালুয়া কিংবা গোশতের বাটি পৌঁছে যায় প্রতিবেশীর বাড়ি বাড়ি। মেয়ের শ্বশুরবাড়িসহ আত্বীয়-স্বজনের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় একদিন আগেই। শহরাঞ্চলের বাসাবাড়িতে হালুয়া-রুটি বানানো হলেও প্রতিবেশীর কাছে পৌঁছানোর চিত্র খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে আত্বীয়-স্বজনের বাড়িতে হালুয়া-রুটি, গোশত-পরটা পাঠানোর প্রচলন রয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে রুটি-হালুয়ার স্থান দখলে নিচ্ছে পরটা-গোশত। বাসা-বাড়ির পাশাপাশি হোটেল-রেস্টুরেন্টেও অগ্রিম অর্ডার দিয়ে বানানো হয় পরটা।
এদিকে হালুয়া-রুটির প্রচলন কমে এলেও শবে বরাত ঘিরে গরুর গোশতের চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের পাড়ায় পাড়ায়, শহরের মোড়ে মোড়ে গরু জবাই হয়েছে। বেচাকেনা হয়েছে ভাগ হিসেবেও। এছাড়া আকাশচুম্বী দামে গরুর মাংস কেনার সাধ্য না হলেও অন্তত ডেকচিতে চেপেছে মুরগির মাংস।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আরমানুজ্জামানের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলায়। শবে বরাতের দিনে ঘরে হালুয়া-রুটি তৈরি আর বিতরণের ধুম দেখে বড় হয়েছেন তিনি। বলেন, ‘ধর্মীয় রীতি সম্পর্কে খুব একটা জানাশুনা নেই। তবে আমি মনে করি এটি একটি সামাজিক সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। যার মাধ্যমে প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।’
কর্ণফুলী উপজেলার পঞ্চাশোর্ধ্ব গৃহিণী শাকেরা বেগম বলেন, ‘হালুয়া-রুটি তৈরি এখন তেমন একটা হয় না। দেওয়া-নেওয়াও খুব একটা নেই। তবে ঘরে ঘরে গোশত রান্নার প্রচলন আছে।’
শবে বরাত ঘিরে হালুয়া-রুটির প্রচলন নিয়ে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর বলেন, ‘শবে বরাতে হালুয়া-রুটি নিয়ে কোনো অসুবিধা নেই। মানুষ ভালো কিছু খাবে, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করবে, গরিব-দুখিদের খাওয়াবে; এটা ভালো কাজ। তবে এটা যার যার ব্যক্তিগত।’
‘হালুয়া-রুটি খেলেও অসুবিধা নেই আবার না খেলে যে গুনাহ হবে এমন নয়। তবে এটি কোনো ফরজ কাজ না। যারা পারেন খাবেন এবং বাচ্চা থেকে শুরু করে ক্ষুধার্ত-অসহায়দের খাওয়াবেন। এতে সওয়াব হবে।’-যোগ করেন আল্লামা জুবাইর।