জাতীয়

হাসপাতালে বিনিয়োগে আগ্রহী চীন

চীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে চায়। ইতিমধ্যে একটি হাসপাতালে তাদের বিনিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া দেশের প্রতিটি জেলায় যৌথ উদ্যোগে চীনের হাসপাতাল করার প্রস্তাবও আলোচনায় রয়েছে।

এরই মধ্যে চীনের রাষ্ট্রদূত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে দেখা করেছেন। ২রা জুন এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন,‘আমি মন্ত্রী হওয়ার পর চীনের রাষ্ট্রদূত মন্ত্রণালয়ে আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও চিকিৎসকদের সূত্রগুলো বলছে, চার বছর আগে সরকারের কাছে ৬৪টি জেলায় ৫০ হাজার শয্যার হাসপাতাল করার প্রস্তাব দিয়েছিল চীন। সেই প্রস্তাব ধরে তারা আবার এগোতে চাইছে।

স্বাস্থ্য খাতে চীনের বড় ধরনের উপস্থিতি আছে। হাসপাতালের যন্ত্রপাতির বড় অংশ চীন থেকে আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ওষুধের কাঁচামালের বড় উৎস চীন। করোনা মহামারির সময় চীনা টিকা পরিস্থিতি সামাল দিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এখন তারা সরাসরি রোগীর সেবায় যুক্ত হতে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চীনের আর্থিক সহায়তায় স্থাপন করা হচ্ছে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। ছয়তলা একটি নতুন ভবনে হবে, তাতে পোড়া রোগীদের জন্য থাকবে ১৫০টি শয্যা। এতে ব্যয় হবে ২৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনা সরকারের অনুদান আছে ১৮০ কোটি টাকা। গত ৯ই মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এই বিষয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার আগে চীনা প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রকল্প এলাকায় গিয়েছিলেন।

জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দিন গণমাধ্যমকে  জানিয়েছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে জন্মগত হৃদ্‌রোগের শিশুদের আধুনিক চিকিৎসার ব্যাপারে চীনের সঙ্গে একটি প্রকল্পের ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়,করোনা মহামারির শুরুতে চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চীনা মেশিনারি ইঞ্জিনায়ারিং করপোরেশন (সিএমইসি) দেশের বিভাগীয় আট শহরে এবং প্রতিটি জেলা শহরে যৌথ উদ্যোগে হাসপাতাল গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয়। ২০২০ সালে এই প্রস্তাব তারা প্রথম দেয় বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের বাণিজ্যিক শাখায়।

প্রস্তাবে বলা হয়, চিকিৎসাসেবার স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশের মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যায়, সঙ্গে প্রতিবছর ৪০০–৫০০ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশে চলে যায়। এমন পরিস্থিতি মানসম্পন্ন সেবা ও বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের একটি সুযোগ।

হাসপাতালের মান ও রোগীর খরচের বিষয়েও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, এসব হাসপাতালের মান হবে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ বা ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতাল বা বাংলাদেশের স্কয়ার ও ইউনাইটেড হাসপাতালের সমতুল্য। তবে যৌথ উদ্যোগে তৈরি হাসপাতালে রোগনির্ণয় পরীক্ষার ফি হবে ওই হাসপাতালগুলোর ফির চেয়ে কম। এসব হাসপাতালে দেশি চিকিৎসক ও নার্স থাকবেন ৭০ শতাংশ। বাকিদের বিদেশ থেকে আনা হবে। কিডনি, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ ও ক্যানসারের মতো রোগের চিকিৎসা হবে। হাসপাতালের জমির বন্দোবস্ত করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।

প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসকেও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে চিঠি দেয় চীন। ২০২০ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে চীনা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্যতম কাজ ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে হাসপাতাল তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই করা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওই সময় দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠান ৬৪টি জেলায় হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জমির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে দেওয়া চিঠি দেয়। তবে মহামারির কারণে ৬৪ জেলায় হাসপাতাল গড়ে তোলার যৌথ উদ্যোগটি কিছুটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। গত ১৪ই মার্চ সচিবালয়ে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের পর বিষয়টি আবার সামনে এনেছে।

সোমবার (৩রা জুন) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর গণমাধ্যমকে বলেন,‘আমরা আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের কাজটি ঠিকভাবে শেষ করার কথা ভাবছি। অন্য কিছু আপাতত আমাদের চিন্তার মধ্যে নেই।’

স্বাস্থ্য খাতে চীনের বিনিয়োগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ গণমাধ্যমকে জানান, যদি দেশের মানুষ মানসম্পন্ন সেবা পায়, সহজে সেবা পায়, কম মূল্যে সেবা পায়, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগে সমস্যা নেই। কারণ, মানসম্পন্ন সেবার জন্য মানুষ তো বিদেশে যাচ্ছেই। সেই যাওয়াটা বন্ধ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d