১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণার দাবি
পাহাড় রক্ষা করে আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ নগর গড়তে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হলো পিপল’স ভয়েস আয়োজিত সমাবেশ থেকে।
১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণার দাবিতে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়।
নাগরিক সমাবেশ শেষে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে নিহত ১২৭ জন এবং ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে নিহত ১৩০ জনসহ বিভিন্ন সময় পাহাড়ধসে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি জ্বালানো হয়।
পিপল’স ভয়েস, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং পিএসডিআই কনসালটেন্সির আয়োজনে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের অধিকার চরমভাবে হরণ করা হচ্ছে। পাহাড় রক্ষা করতে কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। শেষবার বলতে চাই চট্টগ্রামের সব রাজনীতিবিদ, প্রশাসন ও আন্দোলনকারীরা মিলে একটা বড় সমাবেশ করতে চাই। আমরা শেষ আল্টিমেটাম দেব সেই সমাবেশ থেকে। এরপর আর আমরা ঘরে বসে থাকব না।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে নির্লিপ্ত প্রশাসন ও রাজনীতিবিদরা। কিন্তু অতি সক্রিয় পাহাড়খেকোরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকেই এটা দেখতে হবে৷ এখানে রাজনীতি ও প্রশাসন নীরব থাকে। পাহাড়ের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আপনিই কেবল পারেন, চট্টগ্রামের এই পাহাড় রক্ষা করতে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই পাহাড় রক্ষা করতে হবে। পাহাড় ক্ষয়ে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। মানুষের দাবি সামনে এনে পাহাড় রক্ষা করুন। প্রকৃতি বাঁচলে, দেশ বাঁচবে।
উদীচী চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি জসিম চৌধুরী সবুজ বলেন, প্রতি বছর বলছি পাহাড় কাটা বন্ধ করা হোক, কিন্তু হচ্ছে না। আরো বাড়ছে। আমরা এখনো একটি পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। নাম চেরাগী পাহাড়, কিন্তু পাহাড়ের অস্তিত্ব নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে কিন্তু তাদের কাজ কী? ২০০৭ সালের মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে।
আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ২০০৭ থেকে প্রতি বছর কোথাও না কোথাও পাহাড়ধসে মানুষ মারা গেছে। চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধস নিয়মিত ঘটনা। প্রতিবছর আমরা আর্তনাদ করে যাই। যারা এই পাহাড় কাটে তাদের বিচারের আওতায় আনার কেউ নেই৷ রাষ্ট্র তো আজ অনেক শক্তিশালী কিন্তু এ অপকর্ম যারা করে তাদের কি কেউ বিচারের আওতায় আনতে পারে না। এসব পাহাড়ের মালিকানায় বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। এসব পাহাড় দেখতে সেসব প্রতিষ্ঠানে আমাদের করের টাকায় কর্মচারী আছে। সব পাহাড় দখলকারী চিহ্নিত। পাহাড়ধসে ২০১৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল পুরো দেশ থেকে। কিন্তু পাহাড় রক্ষায় এখনো কোনো উদ্যোগ নেই।
কবি-সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, আমরা যেসব দাবি জানাচ্ছি, সেসব দাবি তো সবাই জানে তবু বাস্তবায়ন হয় না কেন। পাহাড়ধসে যে লোকগুলো মারা যাচ্ছে সেটা হলো হত্যাকাণ্ড। কারণ কেউ এসব পাহাড় দখলের জন্য কেটেছে। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হচ্ছে না কেন? কেননা যারা এসব কাজ করে তারা ক্ষমতাবানদের সঙ্গে জড়িত। তাই আমাদের ঘাতকদের হাত থেকে বাঁচতে হলে আরো সোচ্চার হতে হবে। পাহাড়ে কীভাবে মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং হচ্ছে তাও আমরা জানি।
নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী বলেন, বিশ্বে যেখানেই প্রকৃতি ধ্বংস করা হয়েছে সেখানে বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমাদের পাহাড় ক্রমান্বয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, যারা এসব ঠেকানোর কথা তারাই নষ্ট করছে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে পিপল’স ভয়েস সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, এই প্রশাসন পাহাড়খেকোদের বশ্যতা স্বীকার করেছে। আমরা বলতে চাই আর একটিও পাহাড় কাটা হলে আমরা এবার থেকে সেই পাহাড়ের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করব। আমাদের কেটে তারপর পাহাড় কাটতে হবে৷ এভাবে প্রতিবাদ না করলে পাহাড় বাঁচবে না।
পিপল’স ভয়েসের সংগঠক মিঠুন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক অসীম বিকাশ দাশ, প্রমার কঙ্কন দাশ, আদিবাসী ফোরামের লামিউ মারমা ও বিএনপিএসের এরশাদুল করিম।
উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন মোস্তফা কামাল যাত্রা, পটিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু, সাংবাদিক মিন্টু চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, অধ্যাপক অনিন্দিতা দেবনাথ, অধ্যাপক শেখ বিবি কাউসার ও পিপলস ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান।