১৮ হাজার টাকা চুরির দায় থেকে মুক্ত হতে ৩২ বছর!
১৯৯২ সালে ১৮ হাজার টাকার মতো চুরির অভিযোগে মামলা হয়। বিচার শেষে সেই মামলায় সাজাও হয়। কিন্তু এ মামলার দায় থেকে রেহাই পেতে নরসিংদীর আবদুর রাজ্জাকদের লেগেছে ৩২ বছর।
২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্জাকসহ অন্য আসামিদের খালাস দিয়ে রায়টি দিয়েছেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। সম্প্রতি এই রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আশেক মোমিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট লাকী বেগম ও ফেরদৌসী আক্তার। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯২ সালের ৩০ জুলাই সোনালী ব্যাংক থেকে ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা তুলে ঘরের ট্রাংকে রাখেন জব্বার মিয়া। পাশের কক্ষে বসবাসকারী ইব্রাহিম সেই টাকা রাখতে দেখেন। ৫ আগস্ট রাত ১১টার দিকে ঘরে শব্দের আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখেন ট্রাংকটি নেই। ঘরের বাইরে এসে দেখেন ইব্রাহিম ও কবির ট্রাংক ফেলে দৌড়ে পালাচ্ছে। ট্রাংকের আংটা ভাঙা এবং ভেতরে টাকা নেই। এ ঘটনায় ৭ আগস্ট নরসিংদী থানায় মামলা হয়। তদন্ত শেষে ৭ সেপ্টেম্বর আসামি ইব্রাহিম, কবির, আব্দুর রাজ্জাক ও তার মা কিরন নেছার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এ মামলার বিচার শেষে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ১৯৯৩ সালের ১৫ মে আসামিদের কারাদণ্ড দেন। রায়ে কবির, রাজ্জাক ও ইব্রাহিমকে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং কিরণ নেছাকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন। আলামত হিসেবে জব্দ টাকা বাদীকে ফেরত দিতে বলা হয়।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে আপিলের পর নরসিংদীর দায়রা জজ আদালত ১৯৯৫ সালের ২৫ মার্চ আপিল নামঞ্জুর করেন। এরপর আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যরা হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করেন। শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে হাইকোর্ট বিচারিক আদালত ও আপিল আদালতের রায় বাতিল করেন। আসামিদের টাকা চুরির দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে খালাস দেন।
রায়ে উচ্চ আদালত বলেন, এক নং সাক্ষী হচ্ছেন এই মামলার বাদী। এজাহারের সঙ্গে তার সাক্ষ্যে যথেষ্ট গড়মিল রয়েছে। জবানবন্দিতে বলেছেন, চোরাই টাকার মধ্যে ১৮ হাজার টাকা কিরণ নেছার বাড়ী থেকে উদ্ধার হয়েছেন মর্মে শুনেছেন। একবার বলেছেন ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা টাকার পরিমাণ ১৭ হাজার ৭৫০ টাকা আবার উল্লেখ করেছেন ১৭ হাজার ৬৬৫ টাকা। ২ নম্বর ও ৩ নম্বর সাক্ষী চুরির কথা শুনেছেন। চার নম্বর সাক্ষী টাকা উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলেন না। ৫ নম্বর সাক্ষীও টাকা চুরির কথা শুনেছেন। ৬ নম্বর সাক্ষী কিরণ নেছার কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করার কথা শুনেছেন। ৭ নম্বর সাক্ষী টাকা চুরির কথা শুনেছেন। ৮ নম্বর সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তা।
তিনি জেরায় বলেন যে, কোনো জায়গা থেকে চোরাইকৃত টাকা উদ্ধার করা হয়েছে জব্দ তালিকায় তার উল্লেখ নেই। উদ্ধারকৃত টাকার বিশেষ নম্বর ও চিহ্ন নেই।
সার্বিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণে সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছেন। বাদী আবেদনকারীদের হয়রানির করার হীনমানষে অত্র মিথ্যা মামলাটি করেছে।