২০০ বছরের পুরোনো পুকুর মাটি ফেলে ভরাট
বাঁশখালী পৌরসভার তিনশ’ মিটার দূরত্বে মিয়ার বাজার সংলগ্ন এলাকায় ২০০ বছরের পুরোনো দারোগা পুকুরটি ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। প্রতি রাতে পাহাড়ি মাটি ও জমির টপ সয়েল কেটে ট্রাকে করে ফেলা হচ্ছে পুকুরে।
৫ একর আয়তনের এই পুকুরটি ব্যবহার করতেন স্থানীয় হাজারও বাসিন্দা। ভূমিদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না। পুকুর ভরাটের ঘটনায় বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নীরবতায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা প্রশাসন কিছুদিন আগে ভরাট কাজ বন্ধ করে দিলেও আবারও শুরু হয়েছে ভরাট কাজ।
সরেজমিন দেখা গেছে, চারিদিকে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। পুকুরের দুই তৃতীয়াংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে। একইসাথে ১০০ গজ দূরত্বে ব্রিটিশ আমলের আট একর জায়গায় খননকৃত ঐতিহ্যবাহী কাজী পুকুরটিও ভরাটের প্রস্তুতি চলছে।
স্থানীয়রা জানান, বাঁশখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিপুরা চরন দে’র মালিকানাধীন পুকুরটি হাজার হাজার নারী-পুরুষ নিত্যকাজে ব্যবহার করে আসছিলেন। ত্রিপুরা চরনের ছেলেরা পুকুরটির মালিকানা বিক্রি করে দিলে নতুন মালিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য মাটি ভরাট শুরু করেন।
এর আগে জলদি মিয়ার বাজারে মুন্সি পুকুরটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছিল। বাজারের তিন শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠা বিগত দিনে অগ্নি দুর্ঘটনায় দারোগা পুকুরের পানি ব্যবহার করেছে। বর্তমানে আধা কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দারোগা পুকুর ও কাজী পুকুর ছাড়া আর কোনো জলাশয় নেই।
স্থানীয় জলদী মিয়ার বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, ভূমি দস্যুরা রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে লাল মাটি ও ধানি জমির উপরি অংশ কেটে নিয়ে পুকুর ভরাটের কাজ শুরু করে। ২০০ বছরের পুরোনো পুকুরটি ভরাট হলে এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে। স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী টিপু ও শহীদুল্লাহ বর্তমান মালিক মো. হুমায়ুনের সাথে চুক্তি করে পুকুর ভরাটের কাজ চালিয়ে আসছে। এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন ফেসবুকে প্রতিবাদ ও পুরনো পুকুরটির ভরাট বন্ধের দাবি জানিয়ে আসলেও ভূমিদস্যুদের ভয়ে সরাসরি মুখ খুলতে পারছেন না।
এই কাজে পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ইসহাকও জড়িত আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন কাউন্সিলর ইসহাক।
ভরাট কাজে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ ফোরকান বলেন, ‘আমাদের জায়গা আমরা ভরাট করলে আপনাদের কোনো সমস্যা আছে ভাই? সাংবাদিকদের জ্বালায় মন চায় কবরে ঢুকে যাই। কত সাংবাদিককে টাকা দিলাম। আপনাকেও খরচ দেব। নিউজটি করিয়েন না ভাই।’
মাটি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ টিপু বলেন, ‘আমি কয়েক গাড়ি মাটি ফেলেছি। বাকি মাটি কে ফেলেছে জানি না।’
বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার আজাদুল ইসলাম জানান, ‘পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষেধ। আগুন নিয়ন্ত্রণে একমাত্র ভরসা পুকুরের পানি। কিন্তু মিয়ার বাজারের আশেপাশে দারোগা পুকুর ছাড়া অন্য কোনো পুকুর নেই।’
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার বলেন, ‘পুকুর ভরাটের বিষয়টি জানার পর এসিল্যান্ড গিয়ে ভরাট কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এখন আবার ভরাটের বিষয়ে আমি খোঁজ নিচ্ছি।’