৪৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ!
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে। এস আলম গ্রুপ নামের একটি শিল্পগোষ্ঠী অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে হাতিয়ে নিয়েছে। এই গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ এমন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করেছেন যে কোনো ব্যাংকই তাকে প্রশ্ন করার সাহস পায়নি।
এই আত্মবিশ্বাসের পেছনে ছিল বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ। এই নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন। এস আলম গ্রুপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা সাধারণত তার পরিবারের সদস্যদের নামেই থাকে।
এস আলম গ্রুপের ঋণের প্রধান উৎস হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। এই ব্যাংক থেকে তারা প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
এরকমই একটি উদাহরণ হলো ‘সিলভার ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’। ২০২২ সালে মাত্র ১৮ কোটি টাকায় কেনা এই আটা কারখানার জন্য ২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের আন্দরকিল্লা শাখা ৮৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে। বর্তমানে এই ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
ঋণের কাগজপত্র অনুসারে, সিলভার ফুডের ঠিকানা চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ৩৪৭ নম্বর জিলানী টাওয়ার। তবে এই ঠিকানায় কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
ঋণের কাগজপত্রে চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার মামুনুর রশিদকে চেয়ারম্যান এবং ঢাকার সবুজবাগের মেহেদী হাসানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুটি জমি এবং একটি প্রকল্পকে জামানত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা নেওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামের সাতটি শাখা থেকে ৩৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বাংকের তথ্য অনুসারে, এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে রেকর্ড ২৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
খাতুনগঞ্জ শাখা ছাড়াও ইসলামী ব্যাংকের জুবিলী রোড শাখা থেকে ২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে গ্রুপটি। এর মধ্যে ইউনাইটেড সুপার ট্রেডের জন্য ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা এবং কর্ণফুলী ফ্লাওয়ার মিলসের জন্য ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।
তারা ওআর নিজাম রোড শাখা থেকে ইউনাইটেক্স কম্পোজিট স্পিনিং এবং ইউনাইটেক্স এলপিজির জন্য ২ হাজার কোটি টাকা এবং পাহাড়তলী শাখা থেকে ইউনাইটেক্স স্টিলের জন্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
এছাড়াও ভিআইপি রোড, নবাবপুর এবং গুলশান-১ শাখাসহ অন্যান্য শাখা থেকে আরও কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এই গ্রুপ।