৫ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি, গাজায় পৌঁছাবে মানবিক সহায়তা
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতে বিপর্যস্ত গাজা। এমন অবস্থায় সোমবার ৫ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে গাজা থেকে বিদেশিরা মিশর সীমান্ত দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবেন। এছাড়া গাজায় পৌঁছাবে মানবিক সহায়তা।
এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে দ্য টাইমস অব ইসরায়েল। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টেও এমন তথ্য জানিয়েছে স্পেক্টেটর ইনডেক্স।
খবরে বলা হয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা) যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। এই সময় গাজার সঙ্গে মিশরের রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়া হবে।
যুদ্ধবিরতির সময়ে মিশর সীমান্ত দিয়ে গাজায় থাকা বিদেশিরা বের হতে পারবেন এবং গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানো যাবে।
ফিলিস্তিনি দূতাবাসের প্রতিনিধি কামেল খতিবের বরাত দিয়ে এনবিসি নিউজ রিপোর্ট করেছে, গাজা থেকে মিশরে রাফাহ বর্ডার ক্রসিং সোমবার সকাল ৯টায় খোলা হবে।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ব্যাপক হামলা চালানো ইসরায়েল অবরোধ শিথিল করতে সম্মত হয়েছে। এর আগে রোববার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান যে, ক্রসিংটি খোলা হবে, তবে তিনি নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি।
আগে থেকেই মিশরের রাফাহ সীমান্তে গাজার জন্য সাহায্য নিয়ে যাওয়া শত শত গাড়ি অপেক্ষা করছে। ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের কারণে সেগুলো গাজায় প্রবেশ করতে পারেনি।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, রাফাহ ক্রসিং (ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া গাজায় প্রবেশের একমাত্র সীমান্ত) গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি বিমান হামলার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শনিবার একজন আমেরিকান কর্মকর্তা এএফপিকে নিশ্চিত করেন যে, মিশর এবং ইসরায়েল আমেরিকান নাগরিকদের রাফাহ হয়ে গাজা ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। তবে চুক্তিতে শর্ত আরোপ করেছে মিশর।
মিশরীয় সংবাদ চ্যানেল আল-কাহেরা নিউজ জানায়, মিশরীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত মিশরীয় নিউজ চ্যানেলের মতে, কর্মকর্তারা শুধু বিদেশিদের পারাপারের জন্য ক্রসিং ব্যবহার করতে অস্বীকার করেন। তারা গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর শর্ত জুড়ে দেন।
ইতোমধ্যে, জর্ডান, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে গাজার জন্য সাহায্যের বিশাল চালান মিশরের এল আরিশ বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, মিশর নিজেই ১০০টন ত্রাণ বহনকারী ১০০টি পরিবহন ট্রাকের কনভয় পাঠিয়েছে।
অবরুদ্ধ গাজায় প্রবেশের জন্য মোট তিনটি ক্রসিং পয়েন্ট রয়েছে। এর মধ্যে দুটি সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েল নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি একটি হলো রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং। যা সরাসরি মিশরের সঙ্গে সংযুক্ত।
হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এর ফলে প্রায় ২২ লাখ জনসংখ্যার গাজা তীব্র সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় তীব্র মানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার ইসরায়েলের জ্বালানি মন্ত্রী কাটজ বলেন, ‘গাজায় মানবিক সহায়তা? ইসরায়েলি অপহরণকারীদের ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত কোনও বৈদ্যুতিক সুইচ চালু করা হবে না, কোনও পানির কল খোলা হবে না এবং কোনও জ্বালানী ট্রাক প্রবেশ করবে না।’
জাতিসংঘ গাজার পরিস্থিতিকে ভয়ানক বলে উল্লেখ করেছে। অবস্থার উন্নতিতে দ্রুত সাহায্য পৌঁছানোর দাবি জানিয়েছে তারা। এছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংগঠন ইউনিসেফ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে ২৪৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় এসব ফিলিস্তিনি নিহত হন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় আরও ৯,২০০ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। ৭২৪ শিশুসহ নিহতদের মধ্যে শত শত নারী রয়েছে।
চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতির কারণে গাজার হাসপাতালগুলো ‘কবরস্থানে’ পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবিক সহায়তা সংস্থা রেড ক্রস।
এদিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪০০ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি ইসরায়েলি।