৬৯ হাজার রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়নে সৌদির তাগিদ
স্বাধীনের পর বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে যাওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাসপোর্ট দ্রুত সময়ের মধ্যে নবায়নের তাগিদ দিয়েছে সৌদি সরকার। এ বিষয়ে সৌদি আরবের উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন। রবিবার (১২ মে) হোটেল লা মেরিডিয়ানে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে এ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়ে সাংবাদিকদের সৌদি সরকারের তাগিদের কথা জানান। একই সঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ১৯৭৪ সালের দিকে সৌদি আরবে যাওয়া ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাসপোর্ট নবায়ন করবে বাংলাদেশ।
বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি চুক্তি হয়েছিল। কারণ, ১৯৭৪ সালের পর ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে দেশটিতে যায়। নিয়ম অনুযায়ী তাদের ওই দেশে কেউ কাগজপত্র ছাড়া থাকতে পারে না। সৌদি আরবে অবস্থান করা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশি পাসপোর্টের নবায়ন নেই। আমাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে ওই সব রোহিঙ্গাদের তারা বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না। আমরা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করে দিব। এ বিষয়ে আমরা স্লো যাচ্ছি কেন কিংবা আমাদের কোনো অসুবিধা আছে কি না সেটা দেখার জন্য তারা এসেছিলেন। এ ছাড়াও সৌদি আরবের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমাদের উভয় দেশের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলাপ হয়েছে।’
এই ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার দায়িত্ব কোন রাষ্ট্র নেবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরব কিন্তু ফেরত পাঠাবে না কাউকে। আবার সৌদি সরকার রোহিঙ্গাদের ওই দেশের নাগরিকত্বও দেবে না। তবে কীভাবে থাকবে? সেজন্য তাদের কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন। সেজন্য তারা আমাদের অনুরোধ করেছিল। আমরা গত বছর সেটি স্বাক্ষর করেছিলাম। সেখানে আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, বা কোনো লু-ফলস রয়েছে কি না সেসব বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে তারা এসেছিলেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা তো বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে গিয়েছিল। সুতরাং আমরা শুধু তাদের পাসপোর্ট রিনিউ করে দিব। তাদের নাম-ঠিকানা পাসপোর্টে যেমন আছে তেমনি থাকবে।’
সৌদি আরবের প্রতিনিধিদল উভয় দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তির বিষয়ে প্রস্তাব করেছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। সৌদি যদি এ চুক্তি করে তবে ভালো হবে। বাংলাদেশ থেকে তাদের সিকিউরিটি গার্ডের জন্য আনসার পাঠানোর কথা বলেছি। এ বিষয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। আপনারা জানেন যে, ভিআইপি নিরাপত্তার জন্য আনসাদের আমরা গার্ড রেজিমেন্টের হিসেবে তৈরি করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আলোচনায় সৌদি আবরের উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সৌদিতে প্রায় ৩০ লক্ষ বাংলাদেশি কাজ করছেন। ভবিষ্যতে এ সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিয়ে দেশটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কথা বলেছি। এ বিষয়টি তারাও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছেন। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে যত তাড়াতাড়ি ফেরত পাঠানো যায় সেটি নিয়ে তারা কাজ করছেন।’
‘মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রাম রয়েছে। ইউএই এর সঙ্গে আমাদের কথা চলছে, ভবিষ্যতে ইউএই এর সঙ্গে চুক্তি হবে। সৌদি আরব আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে সম্মত হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
হজে এবার নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার সুন্দর ব্যবস্থাপনা হয়েছে। আমাদের দেশের ইমিগ্রেশন সিস্টেম চালু হয়েছে। এখানে ইমিগ্রেশন করে আর অপেক্ষা করতে হবে না। এদিকে সৌদি আরব রোড টু মক্কা বলে আরও একটি সিস্টেম চালু করেছে। হজ যাত্রীরা তাদের লাগেজ এখানে জমা দেবে, যাত্রীরা সৌদিতে যে হোটেলে উঠবেন সেখানে লাগেজ পৌঁছে দেওয়া হবে। আশা করছি, হজ যাত্রীরা এ সুযোগটি নেবে।’
এর আগে বেলা ১১টায় হোটেল কক্ষে বেশকিছু সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে সৌদি সরকারের উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক হয়। এরপর দুই দেশের প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
রবিবার বিশেষ বিমানে সৌদি সরকারের উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশে আসে। বৈঠক শেষে দুপুর ১টার পর তারা ফেরত যান।