৮টিতে দ্বিমুখী ও চারটিতে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস
৮টিতে দ্বিমুখী ও চারটিতে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস
১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে জমজমাট প্রচারণা ও গণসংযোগে নেমেছেন বেশিরভাগ প্রার্থী, যাচ্ছেন ডোর টু ডোর। ভোট প্রার্থনা করে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে পোস্টারে চেয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, চলছে মাইকিংও। নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কোন কোন প্রার্থী মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসবেন এ নিয়ে চলছে ব্যাপক বিশ্লেষণ। এর মধ্যে ভোটারদের সাথে প্রাথমিক আলোচনায় উঠে এসেছে নানা তথ্য। ৭ জানুয়ারি ভোটের আগে নাটকীয় কিছু না ঘটলে এখনই বুঝা যাচ্ছে নির্বাচনের লড়াইয়ে প্রাথমিক চিত্র।
গত কয়েক দিনে প্রচারণা ও গণসংযোগ বিশ্লেষণে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা, ৮টি আসনে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অবশিষ্ট ৪টি আসনে হবে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এসব লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সাথে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর। তবে সব স্বতন্ত্র প্রার্থীই হচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা। মূলত আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জানিয়েছেন ভোটারেরা।
এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের যে ৪টি আসনে অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা, সেসব আসনগুলো হচ্ছে রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, আনোয়ারা ও চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসন। চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নিজ নির্বাচনী এলাকায় অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। এ আসনে আরো ৫ প্রার্থী থাকলেও তারা ড. হাছান মাহমুদের মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেন তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। তিনি এ আসনে টানা চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এলাকায় রয়েছে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। কর্মীরাও তার জন্য একাট্টা। অনেক আগে থেকে তার নির্বাচনী প্রস্তুতি থাকার কারণে নির্বাচন নিয়ে অনেকটা নির্ভার এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। তারপরও তিনি প্রতিনিয়ত নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে সভা-সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এলাকায়। এ আসনে রয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আরো চার প্রার্থী।
চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালী) আসনে বিভিন্ন দলের ৭ প্রার্থী থাকলেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে অন্য প্রার্থীরা বসে নেই, তারাও প্রচারণা ও গণসংযোগ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে ৭ প্রার্থীর মধ্যে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এ আসনে অন্য প্রার্থীরাও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রামের যে ৮টি আসনে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস মিলেছে সেসব আসনে জমজমাট প্রচারণা চলছে। চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেলের সাথে দ্বিমুখী লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের। এ আসনে অন্য ৫ প্রার্থীও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা’র সাথে দ্বিমুখী লড়াই হবে স্বাচিপ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরীর। এ আসনে অপর ৬ প্রার্থী প্রচারণায় ব্যস্ত দিন পার করছেন। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠের সাথে দ্বিমুখী লড়াই হবে নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের। এ আসনে অপর ৮ প্রার্থীও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু’র সাথে দ্বিমুখী লড়াই হবে সাবেক সিটি মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ মোহাম্মদ মনজুর আলমের। এ আসনে নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ ও তৃণমূল বিএনপির মো. ফেরদাউস বশিরও জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্যরাও বসে নেই। তারা প্রচারণায় ব্যস্ত দিন পার করছেন। চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ লতিফের সাথে দ্বিমুখী লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনের। অন্য ৫ প্রার্থী মাঠে গণসংযোগে ব্যস্ত রয়েছেন। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী’র সাথে দ্বিমুখী লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর। অন্য ৬ প্রার্থীও প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলামী চৌধুরীর সাথে দ্বিমুখী লড়াই হবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরীর। অন্য ৬ প্রার্থীও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী’র সাথে দ্বিমুখী লড়াই হবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেবের। মাঠে অন্য ৫ প্রার্থী প্রচারণায় রয়েছেন। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়বের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এছাড়া অন্য ৫ প্রার্থী জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু-) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম আল মামুন, জাপা’র মো. দিদারুল কবির ও স্বতন্ত্র প্রার্থী লায়ন মো. ইমরানের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। নির্বাচনে অপর ৪ প্রার্থী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, তৃণমূল বিএনপির মো. নাজিম উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ আসনে অপর ৪ প্রার্থী প্রচারণায় ব্যস্ত দিন পার করছেন। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আ. লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটনের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। এ আসনে অপর ৭ প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত দিন পার করছেন।