বন্দরের জেটিতেই খালাস হবে সব ধরনের পেট্রো কেমিকেল
সাগরের পরিবর্তে বন্দরের জেটিতেই খালাস হবে সব ধরনের পেট্রো কেমিকেল। সরকারের নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার পর এখন এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে।
বন্দর সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে আমদানি করা এলপিজি ও এলএনজি’র পাশাপাশি জ্বালানি তেল খালাস করা হয় গভীর সমুদ্রে। বিশেষ করে বিশাল আকৃতির অয়েল কিংবা এলএনজি ট্যাংকার থেকে ছোট ছোট জাহাজে খালাস করে নিয়ে আসা হয় উপকূলবর্তী ডিপোতে। এক্ষেত্রে তেল খালাসের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। আবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকলে খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে হয়। একই সঙ্গে স্থানের অভাবে মজুতও সীমিত হওয়ায় প্রায়ই দেশে জ্বালানি তেলের সংকট লেগেই থাকে।
মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সাবেক মহাব্যবস্থাপক এ কে এম আকতার কামাল বলেন, ‘পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এই তিন তেল কোম্পানি মিলে আমাদের সাড়ে সাত থেকে ৮ লাখ মেট্রিকটন জ্বালানি তেল স্টোরেজের ক্যাপাসিটি আছে। এটা নিতান্তই কম মনে করি আমি। কারণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন, তেল আমদানিতে যখন প্রবেলেম হয়ে যায়, তখন দেখা যায় আমাদের এই মজুতটা ঘাটতি হতে থাকে। তখন অসাধু ব্যবসায়ীরা এটার মূল্য বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে।’
এ অবস্থায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল বাস্তবায়নের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে বেসরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইস্টকোস্ট। আর পছন্দের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার প্রস্তাবিত বে টার্মিনালকে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে পুরোদমে অপারেশনে যেতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, এটা হচ্ছে লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল। যেখানে এলপিজি, এলএনজি এবং প্যাট্রো কেমিকেল রিজার্ভ থাকবে। আমাদের বাংলাদেশে যে রিজার্ভ ক্যাপাসিটি আছে, তার থেকে এটার রিজার্ভ ক্যাপাসিটি বেশি থাকবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের প্রয়োজন রয়েছে। তবে সেচ মৌসুমে সেই চাহিদা অন্তত ২ হাজার মেট্রিক টন বেড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়ায়।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, জ্বালানি তেল-এলপিজি এবং এলএনজিবাহী ট্যাংকার সাগর এড়িয়ে সরাসরি জেটিতে চলে আসবে। এরপর সেই জ্বালানি পাইপের সাহায্যে পাঠিয়ে দেয়া হবে ডিপোতে। ফলে পেট্রোকেমিকেল সরবরাহের সময় তিনদিনের পরিবর্তে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় নেমে আসবে। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচও কমবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাদের পেট্রোলিয়াম রিজার্ভের ব্যাপার চিন্তা করে এ ধরনের একটা টার্মিনাল হলে সেটা চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও সারা দেশের জন্য ভালো হবে।’
নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় প্রায় ৯০০ একর জায়গার ওপর গড়ে উঠছে বে টার্মিনাল। যেখানে তিনটি টার্মিনালের মধ্যে সৌদি আরবভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রেড সী, এবং দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়াল্ড পরিচালনা করতে চায় দুটি টার্মিনাল। আর বাকি টার্মিনাল পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।