দুটি ব্রোঞ্জের দাম ১৫ কোটি!
চীনের হ্যাংঝুতে এবার দুটি ব্রোঞ্জ। এশিয়ান গেমসে ক্রিকেটের হাত ধরে আসা দুটি ব্রোঞ্জপদকেই মুখে চওড়া হাসি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের। ২০১৮ সালে ক্রিকেট ছিল না বলে পদক আসেনি। তাহলে এশিয়াডের মতো বড় মঞ্চে অন্য ইভেন্টগুলোর শুধু কী অংশগ্রহণে শেষ কথা? কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ব্যয় করে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং বিশাল অঙ্ক খরচ করে বিদেশে আনা; সবকিছু শুধুই অর্থ এবং সময়ের অপচয়। ১৭টি ডিসিপ্লিনের মধ্যে ষোলোটিতেই ছিল হতাশা। ১৫ কোটি বাজেটের এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের প্রাপ্তি মাত্র দুটি ব্রোঞ্জ এবং বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ভ্রমণবিলাস।
২৩ সেপ্টেম্বর এশিয়াডের যে মিলনমেলা শুরু হয়েছিল, জমকালো সমাপনীর মাধ্যমে তার শেষ ঘণ্টা বাজবে আজ। গেমসে যথারীতি চীনের আধিপত্য। জাপান, কোরিয়ার সঙ্গে পদকের লড়াইয়ে দারুণভাবে ছিল ভারত। স্বর্ণ তো দূরের কথা, রৌপ্য পর্যন্ত জিততে পারেনি। সবাই যখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের অনেক দূর নিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের গ্রাফটা শুধুই তলানিতে নামছে। মাঠের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই হলেও সরকারি অর্থে ভ্রমণবিলাসে বেশ মজেছিলেন গেমসে দায়িত্ব না পাওয়া এমন অনেক কর্তা। অর্থের সবচেয়ে বড় অপচয় বোধ হয় হয়েছে কারাতেতে।
সবার আকর্ষণ ছিল অ্যাথলেটিকসে ইমরানুরের দিকে। লন্ডনপ্রবাসী এ অ্যাথলেটের পেছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছিল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, সেমিফাইনাল থেকে আউট হয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টের অ্যাথলেট নন। মান যাছাই না করে টেবিলের আলোচনায় আমেরিকানপ্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌসকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন কর্তারা, তার ছিটেফোঁটাও পূরণ করতে পারেননি। বরং পুরুষ বিভাগে বক্সার সেলিম হোসেন কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে চমক দিয়েছিলেন।
এশিয়াডে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি পদক এনে দেওয়া কাবাডিতে এবার হয়েছে ভরাডুবি। ভারতের রাও একাডেমিতে গিয়ে দেড় মাস ট্রেনিং করা, প্রস্তুতিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও দেশের জাতীয় খেলা পারেনি ব্রোঞ্জ জিততে। কোরিয়ান কোচ এনে যে হকিতে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন দেখছিল, সেই হকি গত আসরের চেয়ে করেছে আরও বাজে ফল। ভারোত্তোলনে মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ভার তুলতে পারেননি। দাবায় উন্নতি তো হয়নি, হয়েছে অবনতি। শুধু অংশ নেওয়াই যেন ব্রিজের প্রাপ্তি। জিমন্যাস্টিকস, ফেন্সিং এবং সাঁতারের লক্ষ্যহীন যাত্রার সমাপ্তির পর হয়তো কিছুদিন সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব কষবেন কর্তারা। যেমনটি ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, ‘গেমস তো মাত্র শেষ হয়েছে। আমাদের কোথায় কোথায় সমস্যা ছিল, সেগুলো নিয়ে ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে বসব। আর এখান থেকে কীভাবে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেই পরিকল্পনা নেব।’