দেশজুড়ে

৭ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া চারঘাটের সেই ওসিকে সাময়িক বরখাস্ত

রাজশাহীর চারঘাট মডেল থানার ক্লোজ হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত আদেশপত্রে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

শনিবার (২১ অক্টোবর) বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে আদেশের ওই প্রজ্ঞাপন রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসেছে। রোববার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজশাহী জেলা ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সম্প্রতি এক গৃহবধূর কাছে মাহবুবুল আলম সাত লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন, এমন একটি অডিও ফাঁস হয়। সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর চারঘাট মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার হয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনে সংযুক্ত ছিলেন তিনি। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ওসি মাহবুবুল আলমের বাড়ি নাটোর জেলার গুরুদাসপুরে।

পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘রাজশাহী জেলার চারঘাট মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুল আলমকে বিভাগীয় নিয়ম শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও অসদাচরণের দায়ে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ১২ (১) মোতাবেক এতদ্বারা চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’

প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি ডিআইজি, খুলনা রেঞ্জ, বাংলাদেশ পুলিশ, খুলনা এর কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি মোতাবেক খোরাকী ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন।’

ওই নারীর নাম সাহারা খাতুন (২৮)। তিনি চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের চামটা গ্রামের আবদুল আলিম ওরফে কালুর স্ত্রী। কালু ডিবি পুলিশের একটি মামলায় ছয় মাস ধরে কারাগারে আছেন। তবে স্ত্রীর অভিযোগ, কালুকে ফাঁসানো হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে সাহারা খাতুন উল্লেখ করেছেন, তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র‍্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করেন। চারঘাট এলাকায় তার স্বামীর দেয়া তথ্যে অনেক মাদক কারবারিকে র‍্যাব ও পুলিশ আটক করেছে। এতে তার স্বামী ও পরিবারের ওপরে চারঘাটের মাদক ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হন। তার স্বামীকে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ওপর অত্যাচার শুরু করেন। ১২ সেপ্টেম্বর ওসিকে ফোন দিয়ে তিনি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। ওসি তাকে পরদিন থানায় আসতে বলেন। থানায় গেলে ওসি পাশেই তার কোয়ার্টারে ডেকে নেন তাকে। এ সময় তার ছেলেও তার সঙ্গে ছিলেন। ওসি তার সঙ্গে যেসব কথা বলেন, তা তিনি কৌশলে রেকর্ড করে রাখেন।

৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে ওই নারীর উদ্দেশে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার স্বামী কিন্তু আমার কম ক্ষতি করে নাই। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখনো কিন্তু তোমার গায়ে আঁচর দিইনি। এখন সে রকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে (পুলিশ সুপার) কথা দিয়ে এসেছি। স্যারের এখন কী কী লাগবে-৫ লাখ টাকা। কী কী জিনিস চাইছে-৭ লাখ টাকা লাগবে। আমি বলেছি, আমি চেষ্টা করব। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই। ওপেন। তখন আর কথা কয় না। তোমরা পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের (এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের) চালান দিয়ে দিব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।’

অভিযোগের ওই অনুলিপি সরাসরি ও ডাক যোগে পুলিশের আইজিপি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি অফিসে পাঠানো হয়। অভিযোগের অনুলিপির সঙ্গে ৬ মিনিটি ৫৩ সেকেন্ডের ওসির একটি অডিও রেকর্ডও পাঠানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d