জাতীয়স্লাইডার

বিএনপিকে নয়, তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনার পায়তারা চলছে : প্রধানমন্ত্রী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় সংসদ সদস্যদের (এমপি) বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রবিবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি এসব নির্দেশনা।

দলীয় এমপিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসতে পারে। না এলে আরও অনেক দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তাই বিএনপি না এলেও আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমুলক ও চ্যালেঞ্জিং হবে। এ ভোটে প্রার্থীদের নিজ যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে। তাই দেখে-শুনে যাকে ভালো মনে করবো তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেবো। নৌকা যাকে দেওয়া হবে ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে জয়ী করতে হবে।

দলীয় এমপিদের এসব বিষয় মাথায় রেখে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ঐক্যবদ্ধ না থাকলে জয় সহজ হবে না। এবারে আরও কঠিন হবে কারণ ষড়যন্ত্রকারিরা সব ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। জিততে হলে জনসম্পৃক্ততা ও জনপ্রিয়তা বাড়ান। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরেন।

দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যোগ্যতা দিয়ে এবার মনোনয়ন পেতে হবে। এই সংসদে যারা আছেন তাদের অনেক মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। তাতে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা বা বিদ্রোহী কর্মকান্ড করবেন না। যারা করবে তার রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। কাউকে চেয়ার দেওয়া হবে না। এবার নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তাই নিজ যোগ্যতায় জয়ী হয়ে আসতে হবে।

দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে এই ষড়যন্ত্র চলছে বিষয়টি এমন না। তৃতীয় কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে ধ্বংস করা পায়তারা চলছে।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার কথা সাম্প্রতিক কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সম্প্রতি লুলা ডি সিলভার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, যেভাবে ব্রাজিলকে গুছিয়ে রেখে গিয়েছিলাম এসে দেখি ছারখার করে দিয়েছে। এখন আমাদের দেশেও যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে; দেশটা ধ্বংস করে দেবে। সুতরাং সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, সন্ধ্যায় ৬ টা ১০ মিনিটে শুরু হওয়া বৈঠক চলে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী। এ সময় আওয়ামী লীগ দলীয় কয়েকজন সংসদ সদস্যও বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান। দলীয় সভাপতি তাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং কিছু ক্ষেত্রে জবাবও দিয়েছেন।

এমপিদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের একেএম শামীম ওসমান জোরালো বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীসহ বেশিরভাগ এমপি তার বক্তব্যে সমর্থন জানান। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, সারা দেশে আঞ্চলিক মিডিয়াগুলোকে জামায়াত অর্থায়ন করছে। সরকার, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের এমপি, নেতা, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই লিখছে। প্রয়োজনে আমাকে মনোনয়ন দিয়েন না কিন্তু দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। হাজার বছরে একজন বঙ্গবন্ধু এসেছেন। ভবিষ্যতে আর একজন বঙ্গবন্ধু আসবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু জেলায় জেলায় খন্দকার মোশতাকরা আছে। এরা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে। এই মোশতাকদের চিহ্নিত করতে হবে, এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।

রাজবাড়ীর এমপি কাজী কেরামত আলী তার বক্তব্যে নিজ জেলায় দলীয় কোন্দল নিয়ে কথা বলেন। লালমনিরহাটের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী মোতাহার হোসেন তার বক্তব্যে অভিযোগ করেন, এলাকায় দলে ঐক্য থাকলেও অনেক সময় ঢাকা থেকে অনেকে সমস্যা তৈরি করে। নির্বাচন সামনে রেখে অনেক মনোনয়নের ফেরিওয়ালা বেরিয়েছে। এরা সারা বছর মাঠে থাকে না, নির্বাচনের আগে তাদের তৎপরতা বাড়ে। এমপিদের সমালোচনা করে তারা বক্তব্য দেয়, এতে দলের ক্ষতি হচ্ছে। এদের ব্যাপারে নেত্রীকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে সব তথ্য আছে, আমি সেভাবেই মনোনয়ন দেবো।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন এমপি জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে এমন একটা ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো মনোনয়ন বাণিজ্য করতে বিএনপি এবারও নির্বাচনে আসবে। এরপর যদি দেখে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই তখন ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাবে।

সংসদীয় দলের বৈঠকে বিএনপির সাম্প্রতিক আন্দোলন ও আগামী ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি নিয়েও কথা হয়। তখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ওরা (বিএনপি) আন্দোলন করে করুক, আমাদের বাধা দেওয়ার কিছু নেই। তবে রাজপথ আমরা ছেড়ে দেবো না।

সভার বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার এমপি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বলেছেন নেত্রী। মাঠপর্যায়ের তথ্য-উপাত্ত ও জরিপের মাধ্যমে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় ব্যাক্তিকেই দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে। যিনি মনোনয়ন পাবেন সবাইকে তার পক্ষে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও জানান, পশ্চিমাদের তৎপরতা নিয়ে বৈঠকে তেমন কোনও আলোচনা হয়নি। ষড়যন্ত্র চলছে, চলবে। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই চলতে হচ্ছে।

নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগেরই আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সক্ষমতা রয়েছে দাবি করে হানিফ বলেন, নেত্রী বলেছেন- দেশের অনেকের বিশেষ করে বিভিন্ন সুশীল সমাজের কথাবার্তার ধরন দেখে মনে হয়, কেউ কেউ চাইছেন রাজনৈতিক সরকারের বদলে দেশে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসুক। এতে তাদের সুবিধা হয়। অনির্বাচিত সরকার তৈরি করতে পারলে তাদের ইচ্ছেমতো ডমিনেট করা যায়। তারা চায়, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d