সাগর উত্তাল হামুনে তবু ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রস্নান!
কক্সবাজারে সাগর এখন উন্মত্ত। হামুনের প্রভাবে সকাল থেকে বৃষ্টি ঝরছে। এ বৃষ্টি ভারি বৃষ্টিপাতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। হামুনের মধ্যেও সাগরতীরে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সাগরে না নামতে মাইকিং করা হচ্ছে কিন্তু কেউ সেটা মানছেন না। জীবন নয় সমুদ্রস্নানই জরুরি।
ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সোমবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে কক্সবাজার ও উপকূলীয় এলাকায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এ অবস্থা আজও (মঙ্গলবার) অব্যাহত। বুধবার (২৫ অক্টোবর) কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলসহ সারা দেশে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করছে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস। এ উপকূলকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত রেকর্ড হয়েছে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত।
সকালে সমুদ্র সৈকতে সরেজমিনে দেখা গেছে, সাগর স্বাভাবিক পরিস্থিতির চেয়ে কিছুটা উত্তাল। এর মধ্যে পর্যটকদের দেখা মিলছে। তারা সাগরে নামে গোসল করছেন। এ অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সৈকতের পয়েন্টে পয়েন্টে জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষে চালানো হচ্ছে প্রচারণা। বলা হচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে সাগরে নামা নিরাপদ নয়। তাদের উঠে আসতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!।
সৈকতে নিয়োজিত জেলা প্রশাসনের কর্মী বেলাল হোসেন জানান, পর্যটকরা কোনো অনুরোধ মানছেন না। বার বার বলার পরও সাগরে নেমে গোসল করছেন অনেকে। বেশি অনুরোধ করলে তারা উল্টো রেগে যাচ্ছেন। যদিও লাইফ গার্ড কর্মীরা সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন-এর প্রস্তুতি সভায় পূর্ণিমাকালীন সময়ে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সম্ভাব্য জলোচ্ছ্বাস থেকে নিচু এলাকার জানমাল রক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সে সঙ্গে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, টেকনাফ, পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া, কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে আনতে বলা হয়েছে।
সভায় বলা হয়, জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র আছে। উপকূলীয় কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফ ছাড়াও সেন্টমার্টিন দ্বীপে মাইকিং করে নিচু এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার অনুরোধ করা হচ্ছে।
সভায় জানানো হয়, প্রশাসনের নিদের্শনা না মেনে সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত আড়াই শতাধিক পর্যটককে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজারে অবস্থানরত পর্যটকরা যেন সাগরে গোসল করতে না নামেন, তার জন্য প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পর্যটকদের সহযোগিতাও চাওয়া হয়।
এদিকে, এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সৈকতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন। একে ঘিরে সমুদ্র সৈকতে বিকেলে ৪ লাখের বেশি মানুষের সমাগম হবে। উত্তাল এ পরিস্থিতিতে সাগরে প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান।