সংসদ নির্বাচন: গাইবান্ধা, ফাঁকা মাঠে খেলছে আ.লীগ ফ্যাক্টর জাতীয় পার্টির ভোট
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গাইবান্ধার পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকলেও জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ অন্য দলের প্রার্থীদের তেমন দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় পার্টির ভোটব্যাংক বলে পরিচিত এ এলাকায় আওয়ামী লীগ অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যাচ্ছে। ভোটের মাঠে একাই খেলে যাচ্ছেন তারা। আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতাকর্মী নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। গাইবান্ধায় জাতীয় পার্টির ভোট বড় ফ্যাক্টর হলেও নেতাকর্মীদের সে অর্থে তেমন একটা মাঠে দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন হবে কী হবে না এ নিয়ে দোটানায় রয়েছেন অনেক প্রার্থী। অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে দলীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা। তবে ভেতরে ভেতরে ভিন্ন কৌশলে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন তারা।
গাইবান্ধা-১ আসন : সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি জাতীয় পার্টির দুর্গ নামে পরিচিত। এ দুর্গে হানা দিতে নানা কৌশলে প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। নৌকার মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন আফরোজা বারী ও সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি। সম্পর্কে ননদ-ভাবি এই দুই নারী একই বাড়িতে থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি মাঠ গরম করছেন। এ আসনে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল আলম সরকার লেবু ও সৈয়দ মাসুদা খাজা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপি গোলাম মোস্তফার মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এ আসনে এমপি হন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি ঘরে বসে থাকেননি। ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে নির্বাচনি মাঠে এ আসনে অনেকটাই অগোছাল বিএনপি। দলীয় নির্দেশনা না থাকায় প্রার্থীরা সক্রিয় নন। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে পালটে যাবে ভোটের চিত্র, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। স্ন্দুরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহম্মেদ বলেন, নির্বাচনের জন্য আমরাও রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত। সদস্য সচিব মাহমুদুল প্রামাণিক বলেন, আমাদের একদফা দাবি মেনে নিলেই শুধু বিএনপি নির্বাচনে যাবে। বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে তা হবে অবৈধ সরকার।
গাইবান্ধা-২ আসন : সদরের এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে আছেন। জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি এমপি এবারও নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের জন্য প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ সারোয়ার কবির ও আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুজ্জামান রিংকু নৌকার প্রার্থী হতে মাঠে রয়েছেন। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের দাবি গাইবান্ধা সদর আসনে তাদের বড় ভোটব্যাংক রয়েছে। এ আসনটি পুনরায় দখলে নিতে চান তারা। এ আসনে সাবেক এমপি আব্দুর রশিদ সরকার ও জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব সরোয়ার হোসেন শাহীন আগামী নির্বাচনে লাঙ্গলের প্রার্থী হতে চান। তারা ভোটারদের মন জয় করতে মাঠে রয়েছেন। অন্যদিকে এ আসনে গোপনে মাঠে কাজ করছেন জামায়াতের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বিএনপিসহ অন্যান্য দল নির্বাচনে এলে প্রার্থী যে দলেরই হোক এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. ময়নুল হাসান সাদিক বলেন, এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। তবে সরকার তার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ালে গাইবান্ধার ৫টি আসনেই বিএনপির প্রার্থী দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গাইবান্ধা-৩ আসন : সাদুল্লাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে আওয়ামী লীগের কলহের কারণে কার ভাগ্যে নৌকা প্রতীক জুটবে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বর্তমান এমপি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির নিয়ন্ত্রণে নেই দলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের তৃণমূল এখনো অগোছাল। এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতি ছাড়াও এ আসনে নৌকার সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন, সাদুল্লাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়া খান বিপ্লব, পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদ চৌধুরী বিদুৎ, ব্রিগেডিয়ার (অব.) মাহমুদুর রহমান। ভোটের দৌড়ে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আইনুর রাব্বি চৌধুরী রোমান। তার বাবা ড. ফজলে রাব্বি চৌধুরীর ইমেজে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হলে ভোটের হিসাব পালটে যাবে। তার বাবা ছিলেন ৫ বার এমপি ও জাতীয় পার্টির ডাকসাইটে নেতা। বাবার ইমেজ কাজে লাগিয়ে এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চান আইনুর রাব্বি চৌধুরী রোমান। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলে তিনি এ আসনে লাঙ্গলের জয় সুনিশ্চিত করবেন। অন্যদিকে এ আসনে জামায়াতের ভোটব্যাংক আছে। তাই জামায়াত-বিএনপি নির্বাচনে এলে পালটে যাবে ভোটের হিসাব-নিকাশ। পলাশবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সামাদ মন্ডল বলেন, আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে আছি। সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আমরা অটল। তবে আমাদের ভোটের প্রস্তুতিও আছে। সরকার পদত্যাগ করলে বুঝতে পারবেন বিএনপির শক্তি কতখানি। নির্বাচনি মাঠ বলে দেবে ভোট কোথায় পড়ছে।
গাইবান্ধা-৪ আসন : গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে। বর্তমান এমপি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক পৌর মেয়র আতাউর রহমান ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধানসহ আওয়ামী লীগের ৬ প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। যে কোনো মূল্যে এ আসনটি ধরে রাখতে নানা কৌশলে ভোটের মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তবে এ আসনে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে না গেলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী অধ্যক্ষ মশিউর রহমান ও লুৎফর রহমান চৌধুরীকে হিসাবে রেখেই ভোট হিসাব করতে হবে আওয়ামী লীগের। অধ্যক্ষ মশিউর রহমান ছিলেন বিগত নির্বাচনের প্রার্থী। যদি টাকার খেলা না হয় তাহলে জাতীয় পার্টির এই প্রার্থীকে হিসাবে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভোটের মাঠ সাজানোই আছে। নেতাকর্মীরা আমার মনোনয়নের অপেক্ষায় আছে। মনোনয়ন পেলে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হব। উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধানও নৌকার মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে গোবিন্দগঞ্জের ইপিজেড বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে পালটে দেব এ এলাকার চিত্র। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির থানা আহ্বায়ক ফারুক আহম্মেদ বলেন, সরকারের পদত্যাগ ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। আমরা ভোটে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হলে বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে যাবে। সেই প্রস্তুতি আমাদের আছে।
গাইবান্ধা-৫ আসন : সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। বর্তমানে এ আসনের এমপি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। তরুণ এই নেতা এমপি নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করছেন। এবারও তিনি নৌকার মনোনয়নের আশা করছেন। মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, আশা করি নেত্রী আমাকে আবারও নৌকার মনোনয়ন দেবেন। মনোনয়ন পেলে সাঘাটা ফুলছড়ির চেহারা পালটে দেব। এ আসনে রিপনের পাশাপাশি সাবেক ডেপুটি স্পিকার প্রয়াত ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ে ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফারহানা রাব্বী বুবলীও নৌকার মনোনয়ন চাইছেন। তিনি বলেন, তার বাবা এই এলাকায় অনেক কাজ করেছেন। আশা রাখি আওয়ামী লীগকে সামনে এগিয়ে নিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকার মনোনয়ন দেবেন। এছাড়া জাতীয় পার্টি নেতা গোলাম শহিদ রঞ্জুও এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী। জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় আছেন সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা। তিনি বলেন, আমি এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। সেই হিসাবে দল আমাকে দেখবে এবং বুঝবে বলে আশা রাখি। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির প্রার্থীদের কোনো তৎপরতা নেই। তবে গোপনে তৎপর রয়েছে জামায়াত।