ঢাকার মহাসমাবেশ সফলে নানা তৎপরতা প্রবেশপথের জেলাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি
ঢাকায় ২৮ অক্টোবর স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি।এতে সারা দেশ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের অংশ নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে জনসমাগম বাড়াতে ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের জেলাগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে। এসব জেলায় কর্মসূচি সফলে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন নেতারা। বাধা আসতে পারে আবার স্বাভাবিক পরিবেশও থাকতে পারে-এ দুই ধরনের চিন্তা মাথায় রেখেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের রাজধানীতে প্রবেশের নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
যে কোনো পরিস্থিতিতেই তারা সর্বোচ্চসংখ্যক উপস্থিতি দেখতে চান। এদিকে মহাসমাবেশ থেকে লাগাতার কর্মসূচি দেওয়ার কথা রয়েছে। যা ৩০ অক্টোবর ‘সচিবালয় ঘেরাও’ কর্মসূচির মাধ্যমে শুরুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপি ও তার মিত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকায় ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ করতে চায়। তবে আজ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি কী হয় তার ওপরও কর্মসূচির ধরন নির্ভর করছে। স্বাভাবিকভাবে মহাসমাবেশ করতে পারলে সেখান থেকে ঘেরাওয়ের ওই কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। যদি তা না হয়, তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে। বৈঠকে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারি দল বাধা দিলে, তা উপেক্ষা করে মহাসমাবেশে যোগ দেবেন নেতাকর্মীরা। পরবর্তী কর্মসূচি হিসাবে ঘেরাও, বিক্ষোভ, অবস্থান, অবরোধ এমনকি হরতালের বিষয়েও আলোচনা হয়। গণতন্ত্র মঞ্চের এক শীর্ষ নেতা জানান, বৈঠকে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়েছে ৩০ অক্টোবর যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোট যার যার অবস্থান থেকে পদযাত্রা সহকারে সচিবালয় অভিমুখে রওয়ানা হবে। বিএনপি নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করবে। তাদের পদযাত্রার সম্মুখভাগে থাকবে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য, নারী ও শ্রমিক এবং সব শেষে বিএনপি। তবে বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, মহাসমাবেশ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, যা ১০ দিনব্যাপী হতে পারে। কর্মসূচি ঠিক করতে এখনো আলোচনা চলছে, চূড়ান্ত করা হয়নি। শুক্রবার তা চূড়ান্ত হতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই মহাসমাবেশ হবে। সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার চলছে। শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানাভাবে চেষ্টা করছে। কিন্তু যত বাধাই আসুক বিএনপির মহাসমাবেশ সফল হবে, জনতার ঢল নামবে। অবৈধ সরকার আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।
চূড়ান্ত আন্দোলনকে সামনে রেখে হাইকমান্ডের বার্তা নিয়ে সব সাংগঠনিক জেলা সফর করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে মহাসমাবেশ সফল করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তারা। সমাবেশ সফলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের জেলাকে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, দূর-দূরান্ত থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী সেভাবে নাও হতে পারে। এজন্য ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, গাজীপুর জেলা ও মহানগর, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা থেকে সর্বোচ্চ নেতাকর্মী থাকবে। এজন্য যা যা করণীয় তা সবই করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবেও এসব জেলার নেতারা সব পর্যায়ে বৈঠক করছেন। ব্যাপক প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে।
জানা গেছে, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও ইতোমধ্যে ঢাকা ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। মহাসমাবেশ সফল করতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবারও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রস্তুতি সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নানা দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। এদিন নয়াপল্টনে ভাসানী মিলনায়তনে যৌথ সভা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিও।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএ জিন্নাহ কবির বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশ সফলে ইতোমধ্যে দুটি প্রস্তুতি সভা করেছি। বুধবার (আজ) জেলার সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন এবং উপজেলা বিএনপি নেতাদের নিয়ে সবশেষ প্রস্তুতি সভা করব। এ জেলা বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। যা বিগত সব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রমাণ করেছি। মহাসমাবেশেও কমপক্ষে ২০ হাজার নেতাকর্মী অংশ নেবেন। সে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যাদের রাজধানীতে থাকার ব্যবস্থা আছে, তারা ইতোমধ্যে চলে গেছেন। কোনো বাধাই নেতাকর্মীদের রুখতে পারবে না।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, ভোটাধিকার নেই। নিত্যপণ্য জিনিসপত্রসহ সবকিছুর দাম আকাশচুম্বী। আমরা জনগণের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আজ রাস্তায় নেমেছেন। আন্দোলন সফলে তারা প্রস্তুত।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমাদের অংশগ্রহণ থাকবে অতীতের চেয়েও বেশি। সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশে যেতে উন্মুখ হয়ে আছেন। বরাবরের মতোই এ জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেবেন। আশা করছি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ হবে।