আন্তর্জাতিকজাতীয়

‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে কোনো বিভক্তি নেই’

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবির বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ নিয়ে কোন বিভক্তি নেই, সবাই ফিলিস্তিনের পক্ষে। ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে আরব বিশ্ব দোদুল্যমান।

এখনো তারা জোটবদ্ধ হতে পারেনি। তবে এবার নড়েচড়ে বসেছে। এই যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কথোপকথন শুরু হয়েছে, এটি ইতিবাচক। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ একটি সহিংস চক্রের মধ্যে পড়েছে। এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনই ন্যায়ের পক্ষে আছে। এটি হঠাৎ কোনো ঘটনা নয়, দীর্ঘ বঞ্চনার প্রতিফলন। গাজায় আজ যে নৃশংসতা বা মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে তার কোন ব্যাখ্যা নেই।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার এফডিসিতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

এম. হুমায়ুন কবির বলেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। যাতে দুটি রাষ্ট্র পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে পারে। জাতিসংঘ ছাড়া আর কোন প্রতিষ্ঠান নেই যারা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতা করতে পারে। তাই বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করে ফিলিস্তিন ইসরাইল সংকট সমাধানে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, গাজায় খাদ্য নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, চিকিৎসা নেই। হাসপাতালে লাশের সারি। চতুর্দিকে লাশের গন্ধ। বেঁচে থাকা মানুষগুলো তাঁবুতে অবস্থান করেও মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে পারছে না। রাতে প্রচণ্ড ঠান্ডা, শীতবস্ত্র নেই। দিনে আবার প্রচণ্ড গরম। ছোট্ট শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছে গাজাবাসী। আন্তর্জাতিক মহলের অনুরোধে যে সামান্য ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে গাজার মানুষ বলছে তার চেয়ে বেশি অশ্রু ও রক্ত ঝরেছে। অনেক জায়গায় দেখা গেছে পরিবারের সবাই মারা গেলেও দুই একজন বেঁচে আছে যেন স্বজনদের লাশ শনাক্তের জন্য।

তিনি বলেন, নিরাপদ আশ্রয়ের যাবার কথা বলে সবাইকে একত্রিত করে সেখানে বোমা মারছে ইসরায়েল। মসজিদ, গির্জা ও হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানও ধ্বংস করে দিচ্ছে। বোমা হামলায় হাসপাতালগুলো ধ্বংস করায় পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে ফিলিস্তিনের চিকিৎসা ব্যবস্থা। সন্তানের ছিন্ন বিচ্ছিন্ন লাশ শনাক্ত করতে পারছে না বাবা-মা। মাথার খুলি ভাঙা, ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অনেক শিশুর লাশ হাসপাতালে আনা হচ্ছে। তাই অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের শরীরের বিভিন্ন অংশে নাম লিখে রাখছেন। যাতে হামলায় মারা গেলেও নিজ সন্তানের মৃতদেহটি খুঁজে পাওয়া যায়। এই বর্বরতার অবসান হওয়া উচিত।

কিরণ আরও বলেন, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট সমাধানে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোকে এক টেবিলে বসে আলোচনা করা উচিত। যাতে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। সমঝোতার মাধ্যমে এই সংকটের অবসান ঘটিয়ে দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করা এখন সময়ের দাবি। যাতে ফিলিস্তিন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

জাতিসংঘের মধ্যস্থতার মাধ্যমেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট নিরসন করা নিয়ে ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকার স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক মাসুদ করিম, সাংবাদিক এ কে এম মঈনুদ্দিন ও সাংবাদিক ঝুমুর বারী। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d