সেই মামলা প্রত্যাহার, বাদীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেটের মামলা
চট্টগ্রামে যে মামলায় আদালতের পরোয়ানামূলে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে, সেটি প্রত্যাহার হয়েছে।চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত বাদী রনি আক্তার তানিয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন।
গত ১৬ অক্টোবর মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন তিনি।এদিকে মিথ্যা মামলা দায়ের ও প্রতিপক্ষকে হয়রানির অভিযোগে বাদীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম।দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা ওই মামলার আদেশ, জবানবন্দির কপি সংযুক্ত করে এতে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের কথায় বাদী মিথ্যে মামলাটি করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন— এস. এম. আসাদুজ্জামান, মো. জসিম ও মো. লিটন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওসমান গণি বলেন, ‘আদালত মামলা প্রত্যাহারের আবেদন গ্রহণ করে ১৬ অক্টোবর ২০০ ধারায় বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছেন। বাদীর স্বীকারোক্তি মতে বিবাদীকে হয়রানি করতে মিথ্যে মামলা করায় বাদীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে স্যার নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ শে আগস্ট চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রনি আক্তার তানিয়া নামে গৃহপরিচারিকার বেতন না দিয়ে মারধরের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ারকে আসামি করা হয়। গত ১৬ অক্টোবর মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন মামলার বাদী রনি আক্তার তানিয়া। প্রত্যাহারের আবেদনে এস. এম. আসাদুজ্জামান, মো. লিটন ও মো. জসিমের প্ররোচিত হয়ে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন বলে আবেদন ও জবানবন্দি প্রদান করেন।
জবানবন্দিতে তানিয়া বলেন, ‘আমি একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করি। মামলার ঘটনা পুরোপুরি মিথ্যা। এস. এম. আসাদুজ্জামান, মো. জসিম ও লিটন আমাকে দিয়ে মামলাটি করায়। আসামিরা নির্দোষ। জায়গা নিয়ে ঝামেলা থাকায় ওরা আমাকে দিয়ে মামলা করায়। মিথ্যা মামলা হওয়ায় আমি প্রত্যাহার করতে চাই। ’ সোমবার (৩০ অক্টোবর) মামলা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করা হয়। একই সঙ্গে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় এ মামলার অভিযোগকারীসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বরাবর নথি প্রেরণ করেন। আদেশের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাজী শরীফুল ইসলাম।
গত ৩ অক্টোবর রাতে নগরের চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকার বাসা থেকে দুদকের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে (৬৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে ‘অসুস্থ হয়ে’ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কর্মকর্তার মৃত্যু হয়।
দুদক কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার আদালতে চার পুলিশ কর্মকর্তাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন, যার মধ্যে অভিযুক্ত হিসেবে তানিয়াও আছেন। এরা হলেন, চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম ও পরিদর্শক (তদন্ত) মনিবুর রহমান, সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ইউসুফ ও সোহেল রানা এবং এস এম আসাদুজ্জামান, জসিম উদ্দিন, মো. লিটন, রণি আক্তার তানিয়া ও কলি আক্তার।
মামলার আরজিতে বাদী অভিযোগ করেন, জায়গা-জমি দখলের জন্য আসাদুজ্জামান, জসিম, লিটন, তানিয়া ও কলি মিলে তার স্বামীকে মিথ্যা মামলার আসামি করেন। এতে তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তা দেন চান্দগাঁও থানার অভিযুক্ত চার পুলিশ কর্মকর্তা।